প্রিন্ট এর তারিখঃ রবিবার ৫ অক্টোবর, ২০২৫ ২০ আশ্বিন, ১৪৩২ ১২ রবিউস সানি, ১৪৪৭

রেজিস্ট্রি অফিস এখন দুর্নীতির আখড়া

মাটি মামুন রংপুর

রংপুর রেজিস্ট্রি অফিস এখন দুর্নীতির আখড়া, দলিল থেকে মহাফেজখানা সিন্ডিকেটের দাপট রংপুর রেজিস্ট্রি অফিস আজ আর কেবল দলিল দপ্তর নয় এটি পরিণত হয়েছে অনিয়ম, জালিয়াতি ও দুর্নীতির এক সুসংগঠিত সিন্ডিকেটে। দলিল রেজিস্ট্রি, মহাফেজখানা, রেকর্ড রুম—প্রতিটি স্তরে কার্যত নিয়মের তোয়াক্কা না করে চলছে নেপথ্য কেলেঙ্কারি। ক্ষমতার ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মহাফেজখানার মোয়াজ্জেম হোসেন ও পিয়ন জয়নাল এবং তার প্রধান সহায়ক সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহ। সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহের অতীত কেলেঙ্কারি সাক্ষর জালিয়াতি ও ভূয়া দলিলের মাধ্যমে দুই বোনের প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি জবর দখলের ঘটনায় কুষ্টিয়ার সাবেক সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহকে আদালত কারাগারে পাঠিয়েছিলেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২৫ তারিখে কুষ্টিয়ার চিফ জুডিশিয়াল মেজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে তিনি দিনাজপুরে সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করেন সেখানেও তার কর্মজীবনের রেকর্ড সুবিধার নয়, বর্তমানে তিনি রংপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত আছেন। অভিযোগ আছে—রংপুরেও খাজনা-খারিজ ছাড়া দলিল পারাপারে তার সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে।
সাংবাদিক এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুব্রত কুমার সিংহ বলেন, “এই বিষয়টি আমার কাছে আগে জানা ছিল না। আজ সকালে মৈখিকভাবে জানতে পেয়েছি তবে লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাম্প্রতিক ঘটনা প্রকাশ করে, ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেল পাঁচটার দিকে চুক্তিভিত্তিক নকল নবিশ  মোছাঃ জেছমিন নামের এক মহিলা ভলিউম বইয়ের একটি পাতা ছিঁড়ে ব্যাগে লুকোতে গিয়ে স্টাফদের হাতে ধরা পড়েন ও বিশৃঙ্খলা পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সাংবাদিকরা অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা জেলা রেজিস্ট্রার এস. এম. সোহেলের কাছে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন আমি আজ সকালে মৈখিকভাবে জানতে পেয়েছি আপনারা সাংবাদিক মহল ভালো ভাবেই জানেন বাংলাদেশের সকল রেজিস্ট্রি অফিসেই টুকটাক দুর্নীতি হয়ে থাকে তবে লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহের কাছে এই ঘটনাসহ রেকর্ড রুমে অনিয়ম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,রেকর্ড রুম পরিচালনার জন্য দৈনিক পারিশ্রমিকে অফিস স্টাফ ছাড়াও (৭ – ৮) জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবে সরকারি নিয়োগবিধির আলোকে এটি প্রশ্নবিদ্ধ। মহাফেজখানার পিয়ন জয়নাল ১৭ বছর ধরে একই পদে একই জায়গায় কিভাবে রয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন এটি আমার দেখার বিষয় নয়।
মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি সংক্ষেপে বলেন, ঘটনাটি সত্য এবং জেছমিনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এরপর এক মিনিট সময় চেয়ে জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে চলে যান বারংবার তাকে ডাক দেওয়া হলেও তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি। অভ্যন্তরীণ সূত্র ও কর্মকর্তাদের বক্তব্য অনুযায়ী,মোয়াজ্জেম হোসেন পুরো ঘটনার সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে জড়িত। তার নিয়ন্ত্রণাধীন মহাফেজখানা ও রেকর্ড রুমে ভলিউম বইয়ের পাতা ছেঁড়া, নথি গায়েব, এবং দলিল পারাপারের সকল ঘটনা একটি সুসংগঠিত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। অফিসের কম্পিউটার অপারেটর স্পষ্টভাবে বলেছেন, “মহাফেজখানা পুরোপুরি জালিয়াতির আখড়া। ভলিউম বইয়ের পাতা ছেঁড়ার ঘটনা সত্য। এর পেছনে মোয়াজ্জেম হোসেন ও পিয়ন জয়নাল এর নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে, যার সহায়ক সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহ। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে—কেন অতীতে জালিয়াতির অভিযোগে ধরা পড়া ব্যক্তি আবার সংবেদনশীল দপ্তরে নিয়োগ পেলেন? একজন পিয়ন কীভাবে ১৭ বছর ধরে রেকর্ড রুমের দায়িত্বে থাকতে পারেন?
রংপুর রেজিস্ট্রি অফিসকে দুর্নীতির কালো ছায়া থেকে মুক্ত করতে হলে কেবল বদলি বা নরম নোটিশ নয়; প্রয়োজন স্বতন্ত্র তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। নইলে জনগণের আস্থা চিরতরে হারাবে এই প্রতিষ্ঠান।

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ আনছারুজ্জামান (রেজুয়ান ইসলাম).এম এ,মোবাইল নং- 01717934449 অথবা 01711420076,সহ-সম্পাদক:   ইয়ামিন হাসান-01710524903,বার্তা সম্পাদক: ফারুক হোসেন,সহ-বার্তা সম্পাদক: জাফর ইকবাল রানা।

টি.এল নম্বর: 00078/2026

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃফলিয়া দিগর (বটতলা) বাজার,কামালের পাড়া,সাঘাটা,গাইবান্ধা।

প্রিন্ট করুন