
পাবনা প্রতিনিধিঃ
পাবনার ফরিদপুর উপজেলার পুঙ্গলী ইউনিয়ন পরিষদের ভিজিডি কার্ডের চূড়ান্ত তালিকা হওয়ার পরেও নতুন করে দ্বিতীয় তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সাবমার্সিবল মোটর বিতরণের বিষয়টিও জনপ্রতিনিধিরা জানেন না। এ কারণে বিতরণের সময় জনগণের কাছে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
৬নং ওয়ার্ডের সদস্য সবুজ বলেন,
“গতকাল রাতে ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমাকে ফোন করে জানালেন যে ১৫ সেপ্টেম্বর, সোমবার কার্ড দেওয়া হবে। কিন্তু চাল বিতরণের ব্যাপারে কিছু বলেননি। ১, ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নং ওয়ার্ডের অনেক কার্ড কেটে দিয়েছে। প্রথমে নিজেরাই ভাগাভাগি করেছে, পরে আমাদের সাথেও বসেনি, কিছু জানানিও না। এতে আমাদের সাথে মনোমালিন্য হয়েছে।
রেজুলেশন বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন,
“আমি জানি না। সাধারণত ইউনিয়ন পরিষদে বিভাজন রেজিস্টার, ডিসপাস রেজিস্টার থাকে। উপজেলা থেকে বরাদ্দ আসলে তার রেকর্ড থাকে, বিভাজনের রেজিস্টার থাকে এবং সেই অনুযায়ী রেজুলেশন হয়। কিন্তু এগুলো আছে কি নেই আমি নিশ্চিত নই। আমরা অফিসিয়ালি কোনো তথ্য চাইলে তারা দেয় না। আসলে কেন দেয় না সেটাও বুঝি না। এই রেজুলেশনগুলো ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছেই থাকে। আমি জেলা প্রশাসককে জানাইনি, তবে ইউএনও মাহবুব হাসান এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) সানাউল মোর্শেদকে জানিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন,“আমরা চাই এই সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হোক। কারণ আগামীতে আবার আমরা জনপ্রতিনিধি হওয়ার আশা রাখি। কিন্তু যদি জনগণের আস্থা হারাই, তাহলে তো আমাদের ভবিষ্যৎ শেষ হয়ে যাবে।”
৩নং ওয়ার্ডের সদস্য ঝন্টু আলী সরকার বলেন,
“সবুজ মোল্লা কতটুকু পড়াশোনা করেছেন আমি জানি না। সম্ভবত ৫ম বা ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন, কলেজে যাননি। আগের চেয়ারম্যান সাজেদুল ইসলাম তালুকদার ক্ষমতায় থাকার সময় তাকে উদ্যোক্তার চাকরি দেন। আমরা ভেবেছিলাম গরীব মানুষটা চাকরি করলে সংসার চালাতে পারবে। কিন্তু বর্তমান সরকার পতনের পর থেকে সে ইচ্ছেমতো কাজ করছে। প্রশাসক অনেক সময় পরিষদে আসতে পারেন না, তখন সব কাজ উদ্যোক্তাই করে। কয়েকদিন আগে একটি প্রোগ্রামে দেড়শত লোক অপেক্ষা করছিল, কিন্তু উদ্যোক্তা দেরি করে আসে। আমি প্রতিবাদ করলে লোকজনের সামনে তর্কে জড়িয়ে পড়ে। এ কারণে জনগণের সামনে আমাদেরই ছোট হতে হয়।”
২নং ওয়ার্ডের সদস্য খাইরুল ইসলাম বলেন,
“আগে আমাদের ইউনিয়নে ভালো একজন উদ্যোক্তা ছিলেন। তাকে বাদ দিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান নিজের চাচাতো ভাইকে বসান। পরে তাকেও সরিয়ে সবুজ মোল্লাকে বসানো হয়। সে জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদসহ বিভিন্ন কাজে ভুল করে, যার কারণে জনগণ ভোগান্তিতে পড়ছে। বারবার উপজেলা অফিসে গিয়ে ঘুরে আসতে হচ্ছে। চেয়ারম্যান না থাকায় আমরা এসব ভুল ঠিক করতে পারছি না। সহকারী কমিশনার (ভূমি) চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারেন, কিন্তু আমাদের কথার কোনো গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।”
উদ্যোক্তা সবুজ আলীর নামে অভিযোগ পাওয়া গেলে তার ইউনিয়ন পরিষদে সাক্ষাৎকার নিতে গেলে রুমে তালা পাওয়া যায়,মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন কল কেটে দিয়ে যোগাযোগ করেন নাই।
এছাড়াও শোনা যাচ্ছে, ইউনিয়ন পরিষদের চারজন সদস্যের নামে মাদক মামলার অভিযোগ আছে। তবে গ্রাম পুলিশ আব্দুল মোমিন বলেন,
“আমি কখনোই এমন কিছু দেখিনি।”
অন্য গ্রাম পুলিশরা এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি।
ফরিদপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সানাউল মোর্শেদ বলেন,
“প্রথম তালিকা করার সময় কিছু সদস্য নিজেদের লোকজনকে কার্ড দিয়েছিল, যারা পাওয়ার যোগ্য নয়। তখন আমি ইউএনওকে বিষয়টি জানাই। এরপর গ্রাম পুলিশকে প্রতিটি বাড়ি যাচাই করতে পাঠাই এবং উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে বলি প্রকৃত যোগ্যদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে। যোগ্য নয় এমন কাউকে রাখা হয়নি। সদস্যরা অভিযোগ করছেন কিছু কার্ড কাটা গেছে, কিন্তু বাদ যায়নি। উদ্যোক্তার ব্যাপারেও অভিযোগ থাকতে পারে, যিনি কাজ করেন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকবেই।”
ফরিদপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ পাল বলেন,
“ভিজিডি কার্ডের যে তালিকায় সব কর্মকর্তার স্বাক্ষর থাকবে, সেটিই হবে চূড়ান্ত তালিকা।”
ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন,
“প্রথমে উদ্যোক্তা নিয়োগের শর্ত ছিল এসএসসি পাশ, পরে সেটি এইচএসসি পাশ করা হয়।”
এ বিষয়ে জানার জন্য ফরিদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে ফোন বার বার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই।