
শোয়েব হোসেন : চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার বিতারা ইউনিয়নের মাঝিগাছা গ্রামে আধ্যাত্মিকধর্মী ভিন্নমত ও ইসলামী তরিকত চর্চার কারণে মাসুদ মোল্লা ও আবুল বাশার নামের দুই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অভিযোগ রয়েছে, মৌলবাদে বিশ্বাসী একটি চরমপন্থী গোষ্ঠী তাদের হত্যার হুমকি দিয়েছে এবং বসতবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। স্থানীয় সূত্র মতে, মাসুদ মোল্লা ও আবুল বাশার দীর্ঘদিন ধরে একটি আধ্যাত্মিক ও ভিন্নধর্মী তরিকত অনুসরণ করে আসছেন। তবে গ্রামবাসীর একাংশ তাদের এই ধর্মচর্চাকে “ভ্রান্ত মতবাদ” বলে আখ্যা দিয়ে তা বন্ধ করতে চাপ সৃষ্টি করছে। এ নিয়ে হুমকি-ধামকি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। মাসুদ মোল্লা বলেন, “আমরা আল্লাহর প্রেমে ইবাদত করি, কারো কোনো ক্ষতি করিনি। অথচ আমাদের ধর্মচর্চার কারণে এখন প্রাণনাশের হুমকি আসছে। এই ভেবে আমাদের পরিবার রাতের আঁধারে প্রাণ হাতে করে ঢাকায় পালিয়ে এসেছে।” আবুল বাশার জানান, “আমার স্ত্রী ও ছোট ছেলেকে রেখে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। পরিবার নিয়ে খুব শীঘ্রই ঘরছাড়া হওয়ার পরিকল্পনা করছি, কারণ রাতে ঘুমাতেও ভরসা পাই না।” আজ (৬ আগস্ট) ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে তাঁরা প্রধান উপদেষ্টা ডা. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জান-মালের নিরাপত্তা এবং বসতবাড়ি রক্ষার দাবি জানান। এ বিষয়ে কচুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানান, “এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে যথাযথ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিক্রিয়া মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান এইড অ্যান্ড ট্রাস্ট ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, “ঘটনাটি ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকারের বিরুদ্ধে স্পষ্ট হুমকি। আমরা প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ ও সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।” প্রশ্ন উঠছে— বাংলাদেশে কি এখনো কেউ ভিন্ন মত ও ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে নিরাপদে বাঁচতে পারে? এটি শুধু একটি গ্রামের বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং ধর্মীয় সহনশীলতা, মানবাধিকার ও নাগরিক নিরাপত্তা নিয়ে এক গভীর প্রশ্ন।