
গাইবান্ধার সাঘাটা থানায় ঘটে যাওয়া যুবক সিজুর মৃত্যু এখন একটি জনমন কাঁপানো আলোচনার বিষয়। ঘটনাটি নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন, আশঙ্কা ও গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে। এক পক্ষ বলছে সিজু পানিতে ডুব দিয়ে নিঁখোজ, অন্য পক্ষ বলছে, ঘটনাটি স্বচ্ছ নয়, এর পেছনে কোনো না কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হতে যে সিসিটিভি ফুটেজ অনেকে হাতে পেয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে—সিজু থানায় প্রবেশ করে পুলিশের অস্ত্র ছিনতাই করে আঘাতের চেষ্টা করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে পুলিশ সদস্যকে আহত করে। এ বিষয়কে অনেকেই আইনের দৃষ্টিতে এটি একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করছে। তবে এখানেই শেষ নয়, বরং এখান থেকেই প্রশ্নগুলোর শুরু।
প্রথমত, একজন শিক্ষিত যুবক, সে হঠাৎ করে থানায় ঢুকে পুলিশের উপর হামলা করলো কেন? এর পেছনে কি ছিল ব্যক্তিগত কোনো ক্ষোভ, মানসিক চাপ, নাকি অন্য কিছু? কেউ বলছেন, এর পেছনে হয়তো চোরাই মোবাইল ক্রয় সংক্রান্ত কোন বিরোধ, আবার কারো মতে থানায় কোন আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত জটিলতা।
দ্বিতীয়ত, যদি ধরে নেওয়া যায়, সিজু পালাতে গিয়ে পুকুরে লাফ দেয়, তাহলে তথ্যমতে সাঁতার জানা এই যুবকের গলা অবধি পানিতে মৃত্যু কিভাবে হলো? কেউ বলছেন আতঙ্ক বা ধাক্কায় স্ট্রোক হতে পারে, আবার কেউ সন্দেহ করছেন ভিন্ন কিছুর।
তৃতীয়ত, প্রশ্ন উঠেছে, সিজু থানায় ধারালো ছুরি নিয়ে ঢোকার ফুটেজ থাকলেও বের হবার ফুটেজ কোথায়? যদি তাকে পরে থানায় ধরা হয়, তাহলে কি সেখানে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছিল? যদি তাই হয়, তাহলে সেটি কি মৃত্যুর জন্য কোনোভাবে দায়ী?
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, সিসিটিভি ফুটেজের একটি অংশ গোপন রাখা হচ্ছে—এমন অভিযোগ স্থানীয়, ফেসবুক ব্যবহারকারী নেটিজেন সহ বিভিন্ন সচেতন সাংবাদিক মহলের। প্রশ্ন জাগে, যদি কিছু গোপন না থাকে তাহলে ফুটেজ প্রকাশে আপত্তি কোথায়? নাকি প্রকাশ পেলে আরও বড় প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে?
অপরাধ নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের দাবি, পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট-ই হয়তো এই মৃত্যু রহস্যের মূল চাবিকাঠি। অনেকের আশা তদন্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে, এবং পরিবার ও সাধারণ জনগণের জিজ্ঞাসার উত্তর পাওয়া যাবে।
সিজুর মৃত্যু নিয়ে গুজব নয়, দাবি প্রকৃত সত্যের উদঘাটন। গণমাধ্যমকর্মীরা, জনতার কণ্ঠস্বর হিসেবে সেই সত্য খোঁজার দাবি জানিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক জুড়ে।
জনপ্রশ্নগুলোর কিছুটা উত্তর খুঁজে-
সিজু কেন থানায় ঢুকে পুলিশের উপর হামলা করলো?
হয়তো তাৎক্ষণিক রাগ, আগের কোনো ব্যক্তিগত ক্ষোভ, বা মানসিক ভারসাম্যহীনতা। আবার থানায় আগেই কোনো নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল কিনা, সেটাও তদন্তের বিষয়।
সাঁতার জানা মানুষ কীভাবে গলা অবধি পানিতে ডুবে মারা যায়?
অভিজ্ঞদের মতে আতঙ্ক, স্ট্রোক, মাথায় আঘাত পাওয়া বা অচেতন হয়ে পড়া—এসব কারণ থাকতে পারে।
সিজু কি থানার ভেতর থেকে পালিয়ে পুকুরে গেছে, নাকি আগে ধরা পড়ে তারপর আহত অবস্থায় পুকুরে গেছে ?
ফুটেজের পুরোটা এখনো প্রকাশ হয়নি। যদি পরে ধরা পড়ে, তাহলে নির্যাতনের সম্ভাবনা থাকতেই পারে।
সিসিটিভি ফুটেজের সব অংশ প্রকাশ করা হচ্ছে না কেন?
হয়তো প্রশাসনিক কারণে বা তদন্তের স্বার্থে। তবে এতে জনমনে সন্দেহ তৈরি হওয়াটাও স্বাভাবিক।
সিজুর মৃত্যু আসলে কিভাবে হলো? পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট ও সিসিটিভি ফুটেজের সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ ছাড়া নিশ্চিতভাবে কিছু বলা কঠিন। সঠিক তদন্ত, মূল ঘটনা উদঘাটন হলে নিহত সিজুর পরিবার ও দেশবাসী জানবে এ মৃত্যুর সঠিক কারণ।