এক প্রান্তে জন্ম, অপর প্রান্তে মৃত্যু, এর মাঝখানের অংশটির নাম জীবন। কিন্তু জীবন কি সবাই পায়? জন্ম ও মৃত্যুর মাঝখানে কেবল যেটুকু সময় পরম প্রভুর ভালোবাসায় উদ্ভাসিত হয়, কেবল সেই অংশটুকুর নাম জীবন।
কিন্তু অধিকাংশ মানুষের জীবন তো মৃত্যুরই নামান্তর। তারা হিংসা, ঘৃণা, লোভ, অহংকার ইত্যাদির মৃত্যু কূপে ঘুরে বেড়ায়, ফলে জীবনের প্রকৃত স্বাদ বা জীবন তারা পায় না।
আমার শৈশব কালে স্কুলে যাবার সময় এক টাকা দিয়ে দিতো আমার বাবা। কখনো অভিমান করে রাতে খাবার না খেলে বাবা এক টাকা দিয়ে অভিমান ভাঙিয়ে খাওয়াতো। বলতো, রাতে না খেলে একটি চড়ুই পাখীর সমান মাংস শরীর থেকে কমে যায়।
আমার জ্ঞান হবার পর মনে নেই বাবা কখনো মেরেছেন কি না।
মানুষ এক জীবনে মুক্ত হতে পারেনা। সুতরাং কোন মানুষের সকল কর্ম ই এক জীবনে সঠিক পাওয়া যায় না। অর্থাৎ ভুল ত্রুটি থাকে, থাকবেই।
আমার পিতা প্রথম জীবনে সাধারণ জীবন যাপন ই করেছেন। কিন্তু তিনি ছিলেন একজন তরিকতপন্থী এবং ওলী আউলিয়াগণকে ভীষণ ভালোবাসতেন।
শেষ জীবনে তিনি আমাদের পাশ্ববর্তী এলাকার একজন ওলীর মাজারে গিয়ে নিয়মিত বসে থাকতেন।
অর্থাৎ পরমাত্মার রঙে রঙিন মহামানবগণের সংস্পর্শে তিনি নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। এভাবেই মানুষ এক জনম দু জনম করে মুক্তির দিকে এগিয়ে যায়।
আমি দেখেছি একটি জীবনের পরিসমাপ্তি। এই তো মাত্র ৩/৪ সপ্তাহ আগে বাবার একটি কঠিন অসুখ ধরা পড়ে, পরের সপ্তাহে অপারেশন, পরের সপ্তাহে ধীরে ধীরে কথা বলা বন্ধ ও মতিভ্রষ্ট হয়ে যাওয়া, এবং আজ সকাল ৬.৩৫ মিনিটে মৃত্যু।
তাঁর জীবনের সবটুকু অংশ হয়তো জীবন নয়, তবে অল্প কিছু সময়ের জন্য হলেও তিনি জীবনের সাক্ষাৎ পেয়েছেন।
আল্লাহ যেন আমার পিতাসহ আমাদের সকলকে বারবার জন্ম ও মৃত্যুর ভয়ানক চক্র হতে মুক্তি দান করুন।