ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় সরকারি হাসপাতাল সংলগ্ন কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড জেনারেল হাসপাতালে(প্রাইভেট) ভুল অপারেশনে রুমা বেগম(২৬) নামের দুই সন্তানের জননীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনাটি ঘটে শনিবার রাত দুইটার পরে। পরে প্রভাবশালী মহলের চাপে তিন লক্ষ টাকায় দফারফা হয়েছে বলে পরিবার সূত্রে জানা যায়। নিহত রুমা বেগম পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর ইউনিয়নের পদ্মকান্দা গ্রামের ভ্যানচালক দেলোয়ার শেখের স্ত্রী। পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহতের দেবর তাহের শেখ জানান,আমার ভাবি রুমা বেগম তার সাত বছরের মেয়ে ও দেড় বছরের পুত্র সন্তান রয়েছে। তিনি প্রায় বছরখানেক ধরে পেট ব্যথায় ভুগতেছিল। শনিবার ডাক্তার দেখাইতে কেয়ার হসপিটালে যায়। সেখানে চিকিৎসকরা দ্রুত আল্ট্রাসনোগ্রাম করাইতে বলেন। করানের পরে চিকিৎসকরা এপেন্ডিসাইটিস হয়েছে বলে রাতেই অপারেশনের সময় দেন। যে চিকিৎসক অপারেশনের কথা বলা হয়েছে তাকে দিয়ে অপারেশন না করিয়ে অন্যকে দিয়ে করিয়েছেন। অপারেশনের পর অবস্থার অবনতি হলে রাত দশটার দিকে তারা (কেয়ার হসপিটালের লোকজন)ফরিদপুরে রিফাট করেন, ফরিদপুরে নেওয়ার পথেই গাড়িতে আমার ভাবি মারা যান। খবর পেয়ে রাত এগারোটার দিকে কেয়ার হসপিটালে পৌঁছাই আমাদের তড়িঘড়ি করে লাশ দেশের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়, আমাদেরকে একটা মিনিটও দাঁড়াতে দেয় নাই । আমাদের কোন মুখ খুলতে দেননি। পরে আমার ভাবির আত্মীয়-স্বজন ও তার বাবা মা আমার ভাই ফরিদপুরে গিয়েছিল তাকে এবং আমাদের না জানিয়ে তিন লক্ষ টাকায় মীমাংসা করে স্ট্যাম্পে সই স্বাক্ষর নিয়েছে। এবং আমরা যেন মুখ না খুলি সে বিষয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে। পরের দিন নিহতের বাবার বাড়ি নগরকান্দা উপজেলার রামেরচর গ্রামে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা এর বিচার দাবি জানাই। এ বিষয়ে রামেরচর গ্রামের ৭ নং ওয়ার্ড চরযোশরদী ইউনিয়নের মেম্বার সরোয়ার হোসেন জানান, আমাদের গ্রামের মিজান মাতুব্বরের মেয়ে রুমা বেগমের অপারেশন করতে গিয়ে মারা গিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন। এদিকে এ ঘটনায় হসপিটালের মালিক মামুন থেকে এখন ডাক্তার মামুন স্যার নামে প্রসিদ্ধ। তার নামে ফেসবুকে ভাইরাল হচ্ছে কিছু পোস্ট, শিরোনাম ডায়াগনস্টিক এর অন্তরালে চলে দেহ ব্যবসা এমন পোস্ট saeif mahmud sojib নামের ফেসবুক আইডি থেকে ভাইরাল হয়। স্থানীয়রা জানান, এই মামুন দুই বছর পূর্বে নিজে অপারেশন করার অপরাধে ছয় মাসের কারা ভোগ করেছেন। ছাড়া পেয়ে ক্লিনিক অন্যত্র সরিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় আবারও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করেন, ডাক্তারের নাম দিয়ে তিনি অনেক সিজার করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি বড় ডাক্তার সেজে সিজার করে থাকেন, বেশিরভাগ সিজার রাতে করেন। এদিকে স্থানীয় samim munshi তার আইডিতে তিনি লাইভে বলেন, এই কেয়ার হসপিটালে মাঝে মাঝেই তারা ভুল চিকিৎসায় রোগী মেরে ফেলেন এর কোন বিচার তাদের হচ্ছে না। প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় প্রতিবারই তারা পার পেয়ে যান। তিনি কেয়ার হসপিটালের মালিক মামুন ডাক্তারের বিচার ও তাদের লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানান ফরিদপুর সিভিল সার্জনের নিকট। এদিকে নিহতের ভাসুরের ছেলে জোবায়ের আহমদ জানান, কেয়ার হসপিটালের মালিক পক্ষরা আমার চাচাদের মুখ বন্ধ রাখতে হুমকি দিয়ে গেছেন। এ কারণেই আমার চাচা একজন দিনমজুর ভ্যানচালক গরিব অসহায় তাদের ভয়ে মুখ খুলছে না। আমার চাচিকে তড়িঘড়ি করে চাচির বাবা-মা তাদের গ্রামে নিয়ে দাফন করেছেন। ভুল অপারেশন করে তিন লক্ষ টাকায় এভাবে পার পেয়ে যাবে আমরা এর বিচার দাবি করছি। এ ঘটনায় কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড জেনারেল হাসপাতালের মালিক মামুন মিয়া ওরফে মামুন ডাক্তারকে তার বক্তব্য হাসপাতালে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি এবং তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে ভাঙ্গা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.তরুণ কুমার পাল বলেন, এই ঘটনায় কোন অভিযোগ পাই নাই, পেলে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অন্যদিকে এ বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ সাজেদা বেগম (পোলিন) বলেন, এমন ঘটনা ঘটে থাকলে অবশ্যই তদন্তপূর্বক দ্রুতভাবে আইনের আওতায় আনা হবে।