
মো: লুৎফুর রহমান রাকিব: আপনাদের মধ্যে যারা তরুণ তারা জানবেন গুগলে সার্চ দিয়ে বা ইতিহাসের বই পড়ে। আর যাদের বয়েস কমপক্ষে ৫৫-৬০ বছর,তারা তো বাংলাদেশের সব কয়টা সরকারের আমলের বাস্তবতা দেখেছেন এবং বহির্বিশ্বের ইতিহাসটাও ভালোই জানেন।এই উভয় ক্যাটাগরির সবার কাছেই আমার কয়টা প্রশ্নঃ- * কোনো সরকারের পতন হলে মামলা হবার পূর্বেই ওই সরকারের সব মন্ত্রী,এমপি,সাংসদ সহ উঁচু পর্যায়ের সব নেতার পালিয়ে যাবার ইতিহাস একটিও আছে কি? * পুলিশ হলো দেশ ও জনগণের সেবক। কিন্তু সেই পুলিশের বড় বড় অফিসাররা পালিয়ে যাবার ইতিহাস বিশ্বের কোথায় ও আছে কি? * সাংবাদিক হলো চতুর্থস্তম্ভের বিবেক। সেই সাংবাদিকরা পালিয়ে যাবার ইতিহাস বিশ্বের কোথায় ও আছে কি? * ডাক্তার হলো সেবক। সেই ডাক্তার ও কেন পালাবে? * শিক্ষক হলো মানুষ গড়ার কারিগর। সেই শিক্ষকরাও পালিয়ে যাওয়া ও ফেরারী হবার ইতিহাস পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে আছে কি? * রাষ্ট্রের সব গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পালিয়ে যাবার ইতিহাস দুনিয়ার কোনো দেশে একটিও আছে কি? না,মামলা হবার আগেই পালিয়ে যাবার এমন ইতিহাস পৃথিবীর কোথায় ও নেই। তাহলে হাসিনার পালানোর সঙ্গে সঙ্গেই সর্বত্রই এই পালানোর প্রতিযোগিতা কেন? যারা আওয়ামীলীগ সমর্থন করে ভোট দেন তারা একটু নিরপেক্ষ চিন্তা করে ভাবুনতো আপনি কোন্ বৈশিষ্ট্যে ও আদর্শে আওয়ামীলীগ করবেন? এটা কি আদতেই রাজনৈতিক দল নাকি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী? ভারতের সহযোগিতায় হাসিনা পুলিশ, সাংবাদিক, ডাক্তার,আইন-আদালত সহ সব শাখা-প্রশাখাকেই কট্রর আওয়ামীলীগপন্থী এবং বিরোধীদলের প্রতি চরম ঘৃণাময় বিদ্বেষী করে সাজিয়েছে রাষ্ট্রের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে। “চোরের মন পুলিশ পুলিশ “- তাহলে এরা কী পালাবেনা? তারা সবাই জানে তারা অপরাধ জগতের দুনিয়ার সব রেকর্ড ভেঙে শীর্ষস্থানীয় হয়ে গেছে। তাদের কোনো ক্ষমা নেই,একথা তারা নিজেরাও জানে। কিন্তু সত্যি হলো এই যে, তারা জেনে বুঝেই ১৬ টা বছর ধরে অপরাধ করে এসেছে। যতোই তারা খুন,গুম ও রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়া অপরাধ করেছে; হাসিনা ততোই তাদেরকে প্রমোশন ও পদোন্নতি করেছে এবং পুরস্কার দিয়েছে।তারা ভেবেছিলো কখনো তাদেরকে কেউ ক্ষমতাচ্যুৎ করতে পারবেনা, সুতরাং যতো অপকর্ম আর যতো অপরাধই হোক,তাদের বিচার কেউই করতে পারবেনা। বলুন তো,আপনি কেন এই সন্ত্রাসী দলটাকে সমর্থন করবেন এবং তাদের অপরাধের কারণে আপনি ও দোষী হবেন? বিবিসির বাংলা বিভাগের সাবেক সাংবাদিক মরহুম সিরাজুর রহমানের কাছে দেয়া হাসিনার সাক্ষাৎকারটি পাবেন আপনি তাঁর লেখা বই ” এক জীবন এক ইতিহাস “-, বইটি পড়লেই আপনি পাবেন শেখ হাসিনা বলেছিলো “আমার পিতার হত্যার পর কেন বাংলাদেশীরা আনন্দ করেছে এবং মিষ্টি বিতরণ করেছে?সুতরাং এই জাতির থেকে প্রতিশোধ নিতেই আমাকে রাজনীতিতে আসতে হবে”। তাহলে বলুন, এই কালনাগিণী সন্ত্রাসীণীর রাজনীতি আপনি কেন করবেন? স্বজন হারিয়েছে খালেদা জিয়া, স্বজন হারিয়েছে ভারতের সোনিয়া গান্ধী, স্বজন হারিয়েছে পৃথিবীর অনেক দেশের রাজনৈতিক দলের প্রধানরা। তারা কেউ কি প্রতিশোধের নামে গণহত্যা চালিয়েছে কেউ? তবে কেন আপনি এই সন্ত্রাসী দলটাকে সমর্থন করবেন? প্রতিদিনই হাসিনার একটা কথাই ছিলো,”স্বজন হারানোর ব্যথা আমার চেয়ে কে বেশী বুঝবে”। বিগত ১৬ বছরে একথা হাসিনা হাজার হাজার বার বলেছে। কিন্তু প্রতিদিনই হত্যা,গুম,ক্রসফায়ার,আয়নাঘর সহ খুন ও অত্যাচারের যাবতীয় স্টিমরোলার চালিয়ে ও ওই একই কথা,” স্বজন হারানোর বেদনা আমার চেয়ে কে বেশী বুঝবে”। বিডিআর গণহত্যা, জামায়াত গণহত্যা, বিএনপি গণহত্যা, হেফাজত গণহত্যা, মোদির আগমনে প্রতিবাদ করলে গণহত্যা, ছাত্র গণহত্যা সহ যাবতীয় খুনের পরও একই সংলাপ হাসিনার,” স্বজন হারানোর বেদনা আমার চেয়ে কে বেশী বুঝবে”। কেন আপনি এই হাসিনা নাগিণীর দল করবেন? তার পদত্যাগ সরাসরি পৃথিবীর সবাই লাইভ দেখলেও এখনো বলে বেড়াচ্ছে “আমি দেশের প্রধানমন্ত্রী, আমি পদত্যাগ করিনি”। এই মিথ্যাবাদী ক্ষমতালোভী হিংস্র খুনির রাণীর দল কেন করবেন আপনি? আপনি নিজেই ভাবুন, আওয়ামীলীগের একজন নেতাকেও কি সৎ পাবেন আপনি?এখনো একজন নেতাকেও কি দেখেছেন যে বিবৃতিতে বলেছে,”গণহত্যা করাটা ঠিক হয়নি “। কেন আপনি এই বদমাশ সন্ত্রাসী দলটি করবেন? অনেকেই ভেবেছিলো হাসিনা পালানোর পর মুজিব ও হাসিনার সন্ত্রাসী আদর্শকে পরিহার করে এই আওয়ামীলীগ দলটা নতুনভাবে একটি ইতিবাচক আদর্শিক দল হয়ে রাজনীতিতে ফিরতে পারে। কিন্তু আমরা কি দেখলাম? গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলা,মূমূর্ষ অবস্থায় আছে এখনো সেনাবাহিনীর চারজন অফিসার। গত পরশু বিএনপি সমাবেশ করে ফেরার পথে রামদা,ছেনি,কুঠার ও দেশীয় অস্ত্রে বিএনপির ওপর হামলা;তাৎক্ষণিক মারা যায় বিএনপির একজন নেতা,ও হাসপাতালে নেবার পর আরো দুইজনের মৃত্যু এবং শোনা যাচ্ছে আরো কয়জন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে যাদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। কেন আপনি এই সন্ত্রাসী খুনির দলটি সমর্থন করবেন? সব শেষে একটি বিষয় চিন্তা করবেন,৫২ এর আন্দোলনে শেখ পরিবারের কেউ মারা গেছে কি? না, মরেনি। ৭১’এর মুক্তিযুদ্ধে শেখ পরিবারের কেউ কি মারা গেছে? না, মরেনি। ২০২৪ সালের স্বৈরাচারীণী হাসিনার পতনে শেখ পরিবারের কেউ কি মারা গেছে বা গ্রেফতার হয়েছে? না, তাও হয়নি। তাহলে বারবার নিজেদের স্বার্থ দেখা এবং দলকে ও দলের নিরীহ কর্মী সমর্থকদের বিপদে ফেলা এই সন্ত্রাসী,খুনি, হরিলুটের আওয়ামী জাহেলিয়াত দলটি আপনি সমর্থন করে কেন তাদের অপরাধ নিজের কাঁধে বয়ে বেড়াবেন?