(লেখক> মোঃ খলিলুর রহমান:
বাংলাদেশে ইসলামী সঙ্গীত গগনের এক উজ্জল নক্ষত্র। ইসলামী সঙ্গীত ভুবনের জীবন্ত কিংবদন্তী। ইসলামী সুর ও সঙ্গীতকে এদেশের আলো বাতাসে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে দিন-রাত পরিশ্রমকারী এক পরিচিত ব্যক্তিত্ব, একটি বাতিঘর, একটি অপরিহার্য নাম ‘সাইফুল্লাহ মানসুরের’ একমাত্র ছেলে ‘মাহসিন’ ইংল্যান্ডের নামকরা :কুইনমেরি বিশ্ববিদ্যালয়’ ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০১৬ সনে। জীবনে ওই প্রথম বিদেশ বিঁভুয়ে ‘মাহসিন’ তার প্রিয়তম বাবা-মাকে ছেড়ে বিদেশ পানে পাড়ি দিয়েছিলেন সম্পুর্ন একা। তখন বাবা চিন্তা করলেন..তাদের প্রানাধিক আদরের সন্তানকে বিদেশে পড়তে যাওয়ার এই বেলায় কি উপদেশ দেয়া যায়? তিনি তার প্রিয় সন্তানকে সাময়িক বিচ্ছেদের ওই যাত্রাক্ষণে উপদেশ দেয়ার জন্যে পবিত্র আল কোরআনের ‘সুরা লোকমানকে’ নির্বাচিত করেছিলেন।’লোকমান হাকিম’ কোন নবী বা রাসুল ছিলেননা। তিনি দাউদ (আ:) এর সমসাময়িক যুগের একজন জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন। প্রখর প্রজ্ঞা ও বিজ্ঞতার জন্য তিনি সকলের নিকট ‘হাকিম’ নামে পরিচিত ছিলেন। ‘লোকমান হাকিম’ তাঁর প্রিয় পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে যে ঐতিহাসিক ও জীবনধর্মী কথাগুলো বলেছিলেন, তা পৃথিবীর সকল বাবাদের জন্য একটি অসাধারন ‘উপদেশনামা’ হিসেবে পরিগনিত হয়েছে।-শত শত বছর পরে মহান রবের নিকট সন্তানের প্রতি ‘লোকমান হাকিমের’ চুম্বকীয় সেই উপদেশগুলো অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য ও যুগোপযোগী মনে হওয়ার কারনে, প্রিয় রাসুল সা: কে পবিত্র কুরআনে ‘সুরা লোকমান’ নাম দিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালা সবিস্তারে জানিয়ে দিলেন। সুরা লোকমান পড়ে কিয়ামত পর্যন্ত দুনিয়ার সকল সন্তানের পিতারা তাদের প্রিয় বৎসকে যুগশ্রেষ্ঠ অসিয়তনামার দ্বারা রবের প্রিয় গোলাম হওয়ার জন্য অনুপ্রেরনা যোগাতে পারবেন।’সাইফুল্লাহ মানসুর’ তার সন্তান-মাহসিনকে বিদেশে যাওয়ার প্রাক্কালে ড্রয়িং রুমে সোফার উপরে বসিয়ে সুরা লোকমানের সেই গুরুত্বপূর্ন আয়াতগুলো তেলাওয়াত করতে বললেন। মাহসিন সুললিত কন্ঠে সুরা লোকমানের ১৬-১৯ নম্বর আয়াতগুলো অর্থসহ তেলাওয়াত করলেন। বাবা… সেই হৃদয়স্পর্শী আয়াতগুলোর অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা করলেন। পাশাপাশি ইংল্যান্ডে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয়া এক বস্তবাদী ভোগবিলাসিতায় পরিপূর্ন সমাজে, মাহসিন তার ধর্মবোধ ও নৈতিকতার স্বকীয়তাকে অক্ষুন্ন রেখে ‘স্টুডেন্ট লাইভ’ কিভাবে পরিচালিত করবে তার উপর এক চমৎকার পরামর্শ দিলেন।পরিশেষে মাহসিনের নিরাপত্তা, সুস্থতার জন্য মহান মালিকের দরবারে দোয়া ও সাহায্য কামনা করলেন। ভালবাসায় সিক্ত হয়ে দুজনে কোলাকুলি করলেন। আবেগে আপ্লুত হয়ে বাবা-ছেলের দু’ গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। তখন এক জান্নাতি পরিবেশে ছেয়ে গেলে চারপাশ।আসুন আমরা যেন সুরা লোকমান থেকে শিক্ষা নিতে পারি, সাথে সাথে মাহসিন তার বাবার কাছ থেকে যেভাবে উপদেশ পেয়েছিলেন সেভাবে আমাদের সন্তানগুলোকে দুনিয়ার সাময়িক বিচ্ছেদের সময় অসিয়ত করে রবের প্রকৃত গোলাম হওয়ার জন্যে উৎসাহ দিতে পারি। আল্লাহ আমাদেরসহ প্রিয় সন্তানদের কবুল করুন। আমিন!