প্রিন্ট এর তারিখঃ রবিবার ৫ অক্টোবর, ২০২৫ ২০ আশ্বিন, ১৪৩২ ১২ রবিউস সানি, ১৪৪৭

সাতক্ষীরায় সাংবাদিক মুনসুরকে লাঞ্চিত করার প্রতিবাদে মানববন্ধন

 আজহারুল ইসলাম সাদী, স্টাফ রিপোর্টারঃ সাতক্ষীরা পৌরসভার সিইও নাজিম উদ্দীন কর্তৃক সাতক্ষীরার সাংবাদিক মুনসুর রহমানকে লাঞ্চিত করার প্রতিবাদে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ মে) সকাল ১১ টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিক সমাজের উদ্যোগে, সাপ্তাহিক সূর্যের আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক আব্দুল ওয়ারেশ খান চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অ্যাড. আবুল কালাম আজাদ, তিনি তার বক্তব্যে বলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভায় নির্বাচিত ১৩ জন জনপ্রতিনিধি রয়েছে, এই ১৩ জনের পরিষদ একজন সরকারী কর্মচারীকে এতোটাই মাথায় তুলেছে যে তিনি আর নিচে নামতে চায় না? সেজন্য যাকে তাকে বাস্টার্ড, যাকে তাকে গালাগালি করছেন। একসময়ে মধ্যযুগে জমিদাররা প্রজাদের সাথে যেমন আচারণ করতো এই নাজিম উদ্দীনের ব্যবহারও তেমনি হয়ে গেছে। বায়জিদ বলে একটি প্রতিবন্ধী ছেলে রয়েছে। সে নিউ মার্কেট মোড়ে একটি টলের দোকানের মধ্যে কম্পিউটার পরিচালনা করে তার পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করে। সেই টলটি উচ্ছেদ করে পৌরসভায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মিটিং এ বীর মুক্তিযোদ্ধা, মাননীয় সংসদ সদস্যগণ, জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন সুধীজনের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে কুরবানি ঈদ পর্যন্ত জেলার কোথাও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে না। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পরে সিইও টলটি পৌরসভায় নিয়ে যাওয়া অবৈধ হয়েছে। এর পিছনে কোন ব্যক্তির আক্রোশ থাকতে পারে। তিনি আরও বলেন, এই সিইও এর কর্মজীবন মোংলায় শুরু হয়। সেখানে একটি ফার্মেসীতে অভিযান পরিচালনা করতে যেয়ে মারামারি করেন। ঐ ঘটনায় তার বিচার বিভাগীয় শাস্তি হয়। পরে তাকে বদলী করা হয় কক্সবাজারে, সেখানে তার দাদার বয়সী এক ব্যক্তিকে কান ধরে উঠবস করানোর জন্য বদলী হয়ে কুড়িগ্রামে যায়। সেখানেও বাংলা ট্রিবিউনের একজন সাংবাদিককে অন্যায়ভাবে কারাদন্ড দেওয়ার মতো অপরাধ করেন। এই ঘটনায় রাষ্টপতির কাছে ক্ষমা পেয়ে চাকুরী রক্ষা করে। সেই নাজিমের মতো কর্মকর্তার সাতক্ষীরা পৌরসভায় জায়গা হয়? এই ব্যক্তি সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিকের সাথে যে আচারণ করেছে তা শোভনীয় নহে। এই ধরনের মানুষের কাছে ভালো কিছু আশা করা যায় না? সরকার যেখানে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা করছে, সেখানে নাজিম উদ্দীনের মতো আনস্মার্ট কর্মকর্তার কোনো প্রয়োজন নেই। তাই সরকারের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের বলবো এধরণের আনস্মার্ট কর্মকর্তাকে অবিলম্বে সরিয়ে নেওয়া হোক। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মশারফ হোসেন মশু তার বক্তব্যে বলেন, আজকের এই মানববন্ধন আমরা সমর্থন জানাচ্ছি, সাতক্ষীরা পৌরসভায় এমন একজন কর্মকর্তা আছে যার জন্য প্রতিনিয়ত মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সরকারের কাছে আমার আকুল আবেদন, এই সিইও’কে দ্রুত সাতক্ষীরা থেকে প্রত্যাহার করা হোক। আপনারা এগিয়ে যান, সকল মুক্তিযোদ্ধারা আপনাদের ভালো কাজে পাশে আছে। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী তার বক্তব্যে বলেন, ছাত্র জীবন থেকেই এই পেশার সাথে (সাংবাদিকতা) জড়িত আছি। অনেক নেতা, মহারতি এই জেলায় চাকুরী করেছেন, চলেও গেছেন। কিন্তু আমরা সাতক্ষীরায় আছি। আমরা জেনেছি, এই সিইও যেখানেই গিয়েছেন সেখানেই মানুষের সাধে এমন আচারণ করেছেন। কেন এখানে সরকার তাকে রেখেছে জানিনা? ডিজিএফআই, এনএসআই এর প্রতিনিধিরা এখানে হয়তো বা আছেন তাদের কাছে অনুরোধ জানাই সিইওকে এখান থেকে অপসারণ করুণ। উনার মনে হয় ধারণা নাই। সাতক্ষীরার সাংবাদিকরা কি পারে। আজকের প্রধানমন্ত্রী যিনি আছেন তিনি ২০০৬ সালের ৫ নভেম্বর সাতক্ষীরায় এসেছিলেন। আমরা তার অনুষ্ঠান বয়কট করেছিলাম। সেদিন আমাদের কেউ কিন্তু দমাতে পারেনি। একজন সাংবাদিক আপনার কাছে গেছে তার মানে এই নহে, আপনি তার সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন? আপনি সারারাত ধরে বিভিন্ন লোক নিয়োগ করেছেন। যাতে কেউ এই মানববন্ধনে অংশগ্রহণ না করে। শুধু তাই নহে, আমাদের নাগরিক সমাজ ও নাগরিক কমিটি যে আন্দোলন করছে সে সম্পর্কেও বাজে মন্তব্য করেছেন। আপনি ভালো হয়ে যান। এধরণের কাজ থেকে বিরত থাকুন। নইলে আগামী কিছুদিনের মধ্যে সাতক্ষীরার সাংবাদিকদের রুপ জানতে পারবেন। টিভি জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের আহবায়ক আবুল কাশেম তার বক্তব্যে বলেন, পৌরসভার এই সিইও এমন একজন কর্মকর্তা, উনি যেখানেই থাকেন সেখানেই একজনকে পেটান। উনি যেখানেই থাকেন সেখানের মানুষদের উত্তক্ত করেন। তিনি দেশের কোথাও বেশিদিন চাকুরী করতে পারেনি। সাতক্ষীরাতে কেন পেরেছেন, এখানকার নেতাদের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর নেই। দেশে মেধাবী সন্তানদের কি অভাব রয়েছে। তারমতো অখাদ্য-কুখাদ্য কর্মকর্তাকে পৌরসভায় রাখতে হবে। আর কোনো মেধাবী সন্তান নাই, কোনো বিসিএস কর্মকর্তা নেই। ইতিপূর্বে সাতক্ষীরার অনেক জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। তাদের ব্যবহার তো এমন ছিলো না? আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই এই নাজিম উদ্দীনকে সাতক্ষীরা থেকে সরাতে হবে। তিনি যতোদিন সাতক্ষীরায় থাকবে ততোদিন এধরণের ঘটনার প্রতিনিয়ত জম্ম দেবেন। এভাবেই রাষ্টযন্ত্রের সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। উদীচী শিল্পগোষ্ঠী সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি শেখ সিদ্দিকুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, প্রতিবন্ধী বায়জিদ ও মুনসুরের সাথে সিইও এর রুমে সেদিন আমি ও গিয়েছিলাম। সেখানে যে, অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে সেটা আমার সামনেই। আশ্চর্য্য হয়ে গিয়েছিলাম একজন ম্যাজিস্ট্রেসী পাওয়া বা এডিসি র‌্যাংকের অফিসার এমন দুর্ব্যবহার করেছে তা শুনে। বাস্টার্ড, বানচোদ, বোকাচোদা একজন অফিসার তার অফিসে বসে বলতে পারেন তা ধারণা ছিলো না। ৩২ বছর কৃষি ব্যাংকে চাকুরী করেছি। এধরণের ব্যবহার কোনো অফিসারের মুখে শুনিনি। মুনসুর পরিচয় দিয়েছে সাংবাদিক, সে বাংলায় মাস্টাস্ করেছে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে। এরপরেও সিইও বলছে তোর বাবা কি করে? মুনসুর বলে সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস্ শ্রমিক ছিলেন। একজন শ্রমিকের ছেলে। কথাগুলো এমন যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও এভাবে বলে না। তার কাছে জিরো আমরা। পুলিশ অফিসাররাও এমন ব্যবহার করে না। আমরা শহরের লোকেরা রাগ করলেও এমন খারাপ ব্যবহার করি না। এই জঘন্য ভাষার ব্যবহার তার কাছে আশা করিনা আমরা। আমরা চাই তার মতো একজন জঘন্য ব্যক্তি সাতক্ষীরা থেকে চলে যাক। সিইও বলেন মুনসুর ক্ষমা চাইলে বায়জিদের টল বসবে। আমরা সাতক্ষীরাবাসী শান্তি প্রিয় মানুষ। গালিগালাজ করে যে কথা বলা যায়, সেটি আমার জানা ছিলো না। মুনসুর তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি। সাংবাদিকরা যে লাঞ্চিত হয় তা আমরা চাই না। তিনি একজন বিসিএস ক্যাটাগরির অফিসার। ঐদিন অফিসের কর্মচারীদের সাথেও খারাপ ব্যবহার করেছিলেন। উনি যে কথাগুলো বললেন খুবই দুঃখজনক। একজন সাংবাদিক হয়েই কোন ভাবে মেনে নেওয়ার মতো না। আমার পরিচয় পেয়ে মুনসুরকে ক্ষমা চাইতে বলে, তখন মুনসুর বলে কোনো অন্যায় করিনি। ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসেনা। সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আলি নুর খান বাবুল তার বক্তব্যে বলেন, আপনার চরিত্র স্পষ্ট হয়ে গেছে মানুষের কাছে, আমরা মনে করেছিলাম। আপনি সাতক্ষীরায় এসে ভালো হয়ে যাবেন। কিন্তু কয়লা ধুলে যে ময়লা যায় না তা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। সাতক্ষীরার মানুষ শান্তিপ্রিয়। যখন ফুসে উঠে তখন মানুষ বুঝতে পারে। আপনার মতো একজন্য ব্যক্তিকে কিভাবে পৌরসভায় রাখা হয়েছে তা বোধগম্য নহে। সাতক্ষীরা পৌরসভায় আপনার বাবার জমিদারি দেওয়া হয়নি। এরপরেও যদি সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষের সাথে খারাপ ব্যববহার করেন তাহলে আপনার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। আজকের একজন সাংবাদিককে লাঞ্চিত করেনি। বরং নাগরিক কমিটি সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করেছেন। সাতক্ষীরার সাংবাদিক সম্পর্কে আপনার ধারণা নেই। আপনার যেসব বাবা-চাচারা আছে তাদের কাছ থেকে ধারণা নিয়েন। সাতক্ষীরা জেলা ভূমিহীন সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তার বক্তব্যে বলেন, কাউন্সিলর ও মেয়রকে ম্যানেজ করে পৌরসভাকে গিলে ফেলেছে এই দুর্নীতিবাজ সিইও নাজিম উদ্দীন। ফলশ্রুতিতে তাদের মধ্যে বিভাজন। সম্প্রতি তিনি সাংবাদিককে লাঞ্চিত করেছেন। এই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদের পাশাপাশি অবিলম্বে তাকে সাতক্ষীরা থেকে প্রত্যাহারপূর্বক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করতে হবে। তার সাতক্ষীরায় থাকার কোনো অধিকার নেই। তাকে অপসারণ করে পৌরসভাকে দুর্নীতিমুক্ত করা হোক। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল, আব্দুস সামাদ, বাংলাভিশনের আসাদুজ্জামান আসাদ, দৈনিক তথ্যের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি সৈয়দ রফিকুল ইসলাম (শাওন), বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ, সাপ্তাহিক সূর্যের আলো পত্রিকার বার্তা সম্পাদক ও দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার মোঃ মুনসুর রহমান, সাব-এডিটর মারুফ আহম্মদ খান (শামীম), সাংবাদিক শেখ রেজাউল ইসলাম, হাসান, মাহফুজ, আবু সাঈদ, খায়রুল ইসলামসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিকবৃন্দ। মানববন্ধনের সঞ্চালনায় ছিলেন এখন টেলিভিশনের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি আহসানুর রহমান রাজীব।

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ আনছারুজ্জামান (রেজুয়ান ইসলাম).এম এ,মোবাইল নং- 01717934449 অথবা 01711420076,সহ-সম্পাদক:   ইয়ামিন হাসান-01710524903,বার্তা সম্পাদক: ফারুক হোসেন,সহ-বার্তা সম্পাদক: জাফর ইকবাল রানা।

টি.এল নম্বর: 00078/2026

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃফলিয়া দিগর (বটতলা) বাজার,কামালের পাড়া,সাঘাটা,গাইবান্ধা।

প্রিন্ট করুন