মোঃ আফতাবুল আলম রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি :রাজশাহীর বাঘা উপজেলার দক্ষিনাংশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী পার হয়ে পদ্মার চরে বিভিন্ন কাজে প্রতিদিন যাতায়াত করেন দুই পাড়ের শ্রেণী পেশার হাজারো মানুষ। যোগাযোগ বিছিন্ন পদ্মার চরে চকরাজাপুর নামে আলাদা ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা হয়েছে । ইউনিয়নটিতে ২টি কমিউিনিটি ক্লিনিক, ৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ২০১২ সালে ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পর অন্ধকার দুর করেছে বিদুৎতের ঝলমলে আলো। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় একাধিক সেবা পেলেও স্বাধীনতার এত বছরেও সেতুর অভাবে উপজেলার বৃহৎ অংশ ব্যাপক উন্নয়নে পিছিয়ে রয়েছে। উপজেলা শহর থেকে ইউনিয়নটির দুরুত্ব ১৫ কিলোমিটার। পলাশি ফতেপুর, ফতেপুর পলাশি,কালিদাখালি,উদপুর, দাদপুর, কড়ারি নওশারা, চৌমাদিয়া সহ ১২ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। এপারের মানুষ ওপারে যান কৃষি জমিতে। সব মিলে প্রতিদিন বিভিন্ন পেশার হাজারো মানুষ এপার-ওপারে যাতায়াত করেন। কৃষিপণ্য ক্রয়-বিক্রয় ও জরুরি চিকিৎসাসহ উপজেলা,জেলা শহরের কলেজে যাতায়াত করেন,গড়গড়ি ইউনিয়নের চানপুর,ব্যংগাড়ি, সরেরহাট, খায়েরহাটসহ বাঘা পৌরসভার কলিগ্রাম এলাকার সড়কঘাট ও পাকুড়িয়া ইউনিয়নের কিশোরপুর-গোকুলপুর খেওয়া ঘাট নামক স্থান দিয়ে। সেতুর অভাবে পদ্মার মরা খাল পার হয়ে চরম দুর্ভোগে চলাচল করতে হয় বর্ষায় নৌকা ও খরা মৌসুমে বাঁশ বা কাঠের সাঁকোতে টোল দিয়ে। কষ্টের নদী পারাপারে পূরণ হয়নি সেতুর দাবি। এলাকাবাসির অভিযোগ টিআর, কাবিটাসহ স্থানীয় সরকারের আওতায় যে উন্নয়ন বরাদ্দ পাওয়া যায়, সেগুলো দিয়েও ঠিকমতো রাস্তার কাজ হয়না। প্রয়োজন মেটাতে আবাদি জমির পাশ ও নদীর পাড় দিয়েই চলাচল করতে হয় তাদের। বুধবার (১৩-০৩-২০২৪) সরেজমিন দেখা যায়, অধিকাংশ রাস্তা কাঁচা। দুইটি পিচঢালা পাঁকা রাস্তার একটি ৫০০মিটার। ইউনিয়নটির পার্শ্ববর্তী জেলা কুষ্টিয়া। স্থানীয়রা জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় এলাকায় গড়ে উঠেনি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনার জন্যে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীকে ঝুঁকি নিয়েই পার হতে হয়। বর্ষায় নৌকাডুবি, বাঁশর সাঁকো ভাঙাসহ নানা দুর্ঘটনার শিকারও হতে হয় তাদের। অসুস্থ রোগীদের জরুরি চিকিৎসায় বিপাকে পড়তে হয় এলাকার মানুষকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়,২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নদীর ওপারে সাঁতরায়ে যাওয়ার সময় নদীতে ডুবে মারা যায় নবম শ্রেণীর ছাত্র সবুজ। ২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে গড়গড়ি ইউনিয়নের খানপুর এলাকার রাজু মাঝির ঘাটে নৌকা ডুবিতে কলেজ ছাত্র সুমন ও স্কুল ছাত্র মনিরুল মারা যায়। লেখা পড়ার খরচ যোগানোর জন্য নদী পার হয়ে ওপারের মাঠে কাজে যাচ্ছিল তারা। এসব তথ্য জানান,নারায়নপুর গ্রামের আসলাম সর্দার,সুলতানপুর গ্রামের মন্টু হোসেন ও চানপুর গ্রামের চান্দের আলী। চাষী সেকেন্দার জানান, চলাচলকারিদের যেন এটা একটা মরণফাঁদ। খেওয়া ঘাট দিয়ে পারাপারের কারণে নদীর ওপারে আবাদি পণ্যের দাম কম পাই। খরচের কারণে পণ্য বিক্রিতে মোটা অঙ্কের লোকসান গুনতে হয়। সবজি ব্যবসায়ী রাহাত আলী জানান,বাঁেশর সাকো পার হতে ২০ টাকা দিতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল করিম বলেন, ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতিতেই পার হচ্ছে বছরের পর বছর । কেউ কথা রাখছে না। মরার আগে হয়তো ব্রিজ দেখা হইবে না। এপার থেকে ওপারের স্কুলে যাতায়াত করেন তাদের একজন চৌমাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সোহেল রানা জানান, সারা বছরই নৌকায় খেওয়াঘাট পার হয়ে যাতায়াত করতে হয়। চরাঞ্চল থেকে এপারের কলেজে পড়তে আসা শাহ্দৌলা সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নৌরিন দেওয়ান ও মুন্নি খাতুন বলেন, চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে পড়াশোনা করছি। নৌকায় চলাচল করতে গিয়ে সঠিক সময়ে পৌঁছানো দুষ্কর হয়। এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী জাহেদুল ইসলাম বলেন, এখনকার সময়ের চেয়ে, বর্ষা মৌসুমে ভোগান্তির শেষ থাকে না। পলাশিফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নুজাহাত সাবনুস তানিয়া বলেন, এখন রাস্তা ধোলায় ভর্তি। বর্ষায় বই ভিজে যায়। অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম মোল্লা বলেন, কয়েক বছর আগে থেকেই তার বাড়ির দক্ষিনে পদ্মা নদীর খালের ওপর ৬০০ মিটার ব্রিজ নির্মাণের কথা শুনে আসছেন। প্রায় ২ বছর আগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মাটি পরীক্ষা (সোয়েল টেষ্ট) করে গেছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন কাজ হয়নি। পদ্মার এপারে গড়গড়ি ইউনিয়ন পরিষদ। সেখানকার চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের আওতায় তার ইউনিয়নের শিমুল তলা নামক ঘাটে ২০২ মিটির ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডিএম বাবুল মনোয়ার বলেন,২০১২ সালে হালিম মোল্লার বাড়ির দক্ষিনে পদ্মা নদীর খালের ওপর ৬০০ মিটার ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেটি বাস্তবায়ন হলে এলাকাটা উন্নত হবে, এই অঞ্চলের মানুষ রাস্তাঘাটের সেবাটা পাবে। এলাকার রাস্তাঘাটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টিআর, কাবিটাসহ স্থানীয় সরকারের আওতায় যে উন্নয়ন বরাদ্দ পাওয়া যায়, তা দিয়ে কাজ হয়না এমন নয়। তবে ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পর রাস্তার উন্নয়নের জন্য প্রকল্প দেওয়া হলেও বাস্তবায়ন হয়নি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের উপজেলা প্রকৌশলী বেলাল হোসেন বলেন, সোয়েল টেষ্টের পর ডিজাইন চলছে। তবে কবে নাগাদ হবে,তা সঠিকভাবে বলতে পারছিনা।