সোহানুল হক পারভেজ রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান : রাজশাহীতে সুদ কারবারিদের ভয়ংকর থাবায় নি:স্ব হওয়ার পথে শতাধিক পরিবার। সুদ কারবারিদের বেপরোয়া ও বেআইনি কর্মকান্ড, অব্যাহত হুমকি ও নানা ষড়যন্ত্রে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। কিছুতেই সুদ কারবারি সিন্ডিকেটের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না এলাকাবাসী ও পুলিশ প্রশাসন। যতই দিন যাচ্ছে সুদ কারবারিরা হিংস্র ও ভয়ংকর হয়ে উঠছে। পুলিশ বলছে, সুদ কারবারি সিন্ডিকেটের সদস্যরা মাদক কারবারির সাথেও সম্পৃক্ত। এছাড়া নারী সুদ কারবারিদের কেউ কেউ পতিতাবৃত্তির সাথেও জড়িত রয়েছেন।
পুলিশ ও ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, নগরীর কাটাখালী থানার থান্দারপাড়া এলাকার মৃত সমশের আলীর দুই ছেলে ও ছয় মেয়ে মিলে গড়ে তুলেছেন সুদ কারবারি সিন্ডিকেট। এছাড়া স্থানীয় আরো কয়েকজনসহ সব মিলিয়ে অন্তত ১৫ জন এই সিন্ডিকেটের সদস্য।
সুদ কারবারিরা হলেন- দুলাল হোসেন (৫৫), নাজমা বেগম (৪৩), ছামেনা বেগম (৩৬), মোসা: নীলা বেগম, মোসা: মনু বেগম (৪৬), শীলা বেগম (৪৫) প্রমুখ। তারা এলাকার নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারগুলোকে টার্গেট করেন। প্রতি লাখে ৩০ পার্সেণ্ট হারে সুদে তারা ঋণ দিয়ে থাকেন।
সুদে যাদেরকে ঋণ দেওয়া হয় তাদের কাছ থেকে ফাঁকা চেক ও স্ট্যাপে স্বাক্ষর করে নেন সুদ কারবারিরা। আসল ও সুদ মিলিয়ে পুরো টাকা পরিশোধ করার পরেও অনেককে আরো সুদ গুণতে হয়। অর্থাৎ কেউ ৩০ পার্সেণ্ট হারে সুদে এক লাখ টাকা ঋণ নিলে তাকে আসল ও সুদ মিলিয়ে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু কোনো কারণে এক বা দুই মাস কিস্তি দিতে না পারলে চক্র বৃদ্ধি হারে আরো অনেক টাকা সুদ গুণতে হয় ভুক্তভোগীদের।
ভুক্তভোগীদের একজন হলেন মোসা: ফেন্সি বেগম। তিনি বলেন, আমি কেক ফ্যাক্টরীতে শ্রমিকের কাজ করি। নীলা, শীলা ও লাকি এই তিনজনের কাছ থেকে মোট ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিই। সুদ ও আসল মিলিয়ে এক বছরের মধ্যে পরিশোধের শর্তে এই টাকা নেওয়া হয়। তবে আমার কাছ থেকে ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্প স্বাক্ষর করিয়ে নেন তারা। ফেন্সি বলেন, এক বছরে আমি চার লাখ টাকা পরিশোধ করেছি। এখন আরো তিন লাখ টাকা দাবি করছেন সুদ কারবারিরা। অবশিষ্ট টাকা না দেওয়ায় সুদ কারবারিরা আমাদের সংসারের যাবতীয় জিনিসপত্র অর্থাৎ লেপ, তোষক, বালিশ, কাঁথা, হাঁড়ি-পাতিলসহ সব জিনিস জোর করে নিয়ে চলে গেছে। এ অবস্থায় তারা অনেকটায় নি:স্ব হওয়ার উপক্রম বলে জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, সুদ কারবারি লাকির কাছ থেকে তিনি বেশ কিছু টাকা সুদে ঋণ নিয়েছিলেন। সুদ ও আসল মিলিয়ে বেশির ভাগ টাকাই পরিশোধ করেন তিনি। তবে তার কাছ থেকে আরো ৪০ হাজার টাকা পেতেন লাকি। এই টাকার মধ্যে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা কম দিতে চেয়েছিলেন তিনি। এই কথা বলাতে সুদ কারবারি লাকি কৌশলে ভুক্তভোগীর ঘরে ঢুকে তীরের সাথে রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করার হুমকি দেন। শেষ পর্যন্ত এক প্রতিবেশির কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা ধার হিসেবে এনে ওই সুদ কারবারিকে তা পরিশোধ করে মুক্ত হন ভুক্তভোগী।
ভুক্তভোগী চাঁদনী বেগম জানান, সুদ কারবারি ছামেনার কাছ থেকে ১৫ হাজার, মনুর কাছে পাঁচ হাজার ও নীলার কাছ থেকে ৩০ হাজার সহ মোট ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন তিনি। সুদ ও আসল মিলিয়ে মোট এক লাখ টাকা পরিশোধ করেন। এরপরেও আরো এক লাখ ১০ হাজার টাকা দাবি করেন সুদ কারবারিরা। অতিরিক্ত টাকা দিতে না চাইলে তারা ভুক্তভোগীকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেন। শুধু তাই নয়, তার প্রতিবন্ধী অসুস্থ মাকে চৌকির বিছানা থেকে টেনে হিচড়ে নিচে নামিয়ে দেন। তার মা প্রতিবন্ধী হওয়ার পাশাপাশি স্ট্রোক করে অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। অথচ টাকার জন্য তার অসুস্থ্য মাকে পর্যন্ত ছাড় দেননি সুদ কারবারিরা।
আরেক ভুক্তভোগী মোসা: তাসলিম ফারিয়া বৃষ্টি জানান, তার স্বামীর অটো গ্যারেজের ব্যবসা রয়েছে। তারা সুদ কারবারি শীলার কাছ থেকে তিন লাখ ও ছামিনার কাছ থেকে দুই লাখসহ মোট পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। পরে জমি ও গহনা বিক্রি করে সুদ ও আসল মিলিয়ে সব টাকা পরিশোধ করার পরেও আরো টাকা দাবি করেন সুদ কারবারিরা।#সোহানুল হক পারভেজ রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান ১৬/ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ফোন :০১৭৬১-৮৯৯১১৯