ঢাকা সোমবার ৭ই জুলাই, ২০২৫

ঢাকা সোমবার ৭ই জুলাই, ২০২৫

Pippa মুভি নিয়ে অনেকেই খুব ক্ষুব্ধ

অনলাইন ডেস্ক ।। প্রকাশিত: সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৩, ৬:০০ অপরাহ্ণ

নজরুল গীতি “কারার ঐ লৌহ কপাট” এবং এ আর রহমান ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা, সমালোচনায় প্রভাবিত হয়ে অ্যামাজন প্রাইমে দেখলাম নতুন সিনেমা “পিপ্পা”।
ভারতীয় সেনা বলরাম সিং মেহতা যিনি ১৯৭১ সালে ভারতের ৪৫ অশ্বারোহী রেজিমেন্টের অধিনায়ক ছিলেন এবং বনগাঁ-যশোর সীমান্তে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগী দেশ ভারতের পক্ষে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাঁর আত্মকথনের উপর নির্মিত সিনেমা এটি।
সিনেমাটি কেমন সে আলোচনায় নাহয় পরে গেলাম, আগে বিতর্কিত গানের বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। এই সিনেমায় কাহিনী গাঁথায় বেশ গুরত্বের সাথেই জুড়ে ছিল গান। অনেকগুলো ছোট ছোট গান আবহসঙ্গীত হিসেবে ছিল অনেকটা অংশ জুড়ে যার সম্ভবত পুরোটাই কিংবদন্তী সঙ্গীতজ্ঞ এ আর রহমানের পরিচালনায়। এ আর রহমানের বেশিরভাগ সুরের কাজ সফট মেলোডিয়াস, এমনকি যুদ্ধের গানেও তিনি এর থেকে বের হতে পারেননি।
বোধ করি পুরো সিনেমায় গানের যে স্বাভাবিক রিদম, তার সাথে মিল রাখতেই তিনি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ” কারার ঐ লৌহ কপাট” গানটির সুর পালটে ফেলেছেন! সিনেমায় গানটি অল্প কিছু সেকেন্ডের জন্যই বেজেছে যা দেখলাম। তবে যে দৃশ্যে গানটি সংযুক্ত হয়েছে, সেখানে বরং তিনি “তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পারি দেব রে” গানটা রাখতে পারতেন। তিনি যে সুর আরোপ করেছেন তার সাথে বরং এই গানটির সুরের কোথায় যেন একটা মিল রয়েছে।
“কারার ঐ লৌহ কপাট” অন্তত ঐ রকম সফট সুরে এবং লোকজ ঢঙে নাচতে নাচতে গাওয়ার দৃশ্যে কোনোভাবেই যাচ্ছিলো না, বেখাপ্পা ঠেকছিল।
সিনেমা হিসেবে “Pippa” ভালোই। যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত ভারতীয় সিনেমা, তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে মুক্তিযুদ্ধ যেমন, সেভাবেই তারা গল্প সাজিয়েছে। তবে বাংলাদেশের মানুষের যে আত্মত্যাগ, মুক্তির স্পৃহা, সংগ্রাম এবং যুদ্ধের সাহসিকতা সেটাকে তারা সম্মান ও গুরুত্বের সাথে তুলে ধরতে সচেষ্ট ছিল, কোনোভাবেই ইগ্নোর করতে চায়নি।
এই সিনেমাটা ইতিহাসের অধ্যায়ে যুক্ত থাকা একটি পরিবারের গল্পও দেখিয়েছে। সিনেমার মূল চরিত্র বলরাম সিং, তার সৈনিক ভাই এবং বোনও যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে যুক্ত হয়ে যায়, পুরো পরিবারের অনুভব, আবেগের সম্মিলিত চিত্র দর্শকের চোখে ধরা দেয়, হৃদয়ও ছুঁয়ে যায়।
বলরাম চরিত্র কিছুটা একরোখা তবে আত্মপ্রত্যয়ী, অন্যদিকে তার ভাই ধীরস্থির এবং সাহসী। তার বোন স্বাধীনচেতা, আধুনিক, রাজনীতিসচেতন। একটি সুশিক্ষিত পরিবারের সন্তানেরা ঠিক যেমন হয়, তেমনই! এই পরিবারটির যাপিত জীবনের যে পারস্পরিক সম্পর্কের সুতোর বুনন, তা অনেকেই রিলেট করতে পারবে।
অশ্বারোহীর যেমন মমতা ও গর্ব থাকে তার তেজী ঘোড়াকে নিয়ে, তেমনি বলরামের রয়েছে তার যুদ্ধ ট্যাংক পিপ্পাকে নিয়ে। যুদ্ধকালীন সৈনিকের ভেতরকার আবেগই এই সিনেমার মূল উপজীব্য।
ছোট ছোট কিছু ভুলভ্রান্তি নিয়ে আলাপ তোলাই যায়৷ বনগাঁ-যশোর অঞ্চলের যে ভূ-প্রকৃতি, তার সাথে পিপ্পা সিনেমায় দেখানো প্রকৃতির অনেক পার্থক্য চোখে পড়েছে। পাহাড়-টিলা দেখে মনে হচ্ছিল যশোর না, যেন সিলেট অঞ্চল নিয়ে সিনেমা! বনগাঁ-যশোর সীমান্তের ভূ-প্রকৃতি নিয়ে আরেকটু স্টাডি করা উচিত ছিল Pippa টিমের।
ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি বাদ দিলে Pippa ভালো সিনেমা, দেখার মতো। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নিজেদের অবদানের এক একটা প্রেক্ষাপট নিয়ে ভারত যেরকম চমৎকার সব সিনেমা বানিয়ে ফেলে, আমাদের এখানে সেরকম বহুমাত্রিক কাজ অতটা হয় না। কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে আমাদের এখানে হয় বেশিরভাগ গতানুগতিক কাজ।
Pippa মুভি নিয়ে অনেকেই খুব ক্ষুব্ধ। অতটা ক্ষোভ বোধহয় সিনেমাটা ডিজার্ভ করে না।