ঢাকা সোমবার ৭ই জুলাই, ২০২৫

ঢাকা সোমবার ৭ই জুলাই, ২০২৫

শাল্লায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এক ঘরে ১০

দিন শংকর ঋষি শাল্লা সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: প্রকাশিত: বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৩, ২:৪০ অপরাহ্ণ

শাল্লায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এক ঘরে ১০ । শাল্লায় জায়গা—জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে গ্রাম্য মাতব্বররা এক দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর পরিবারকে এক ঘরে রেখেছে। গেল প্রায় দশদিন ধরে ওই পরিবারের তিন শিশু সন্তান স্কুলে যেতে পারছে না। মাতব্বরদের ভয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর ছোট দোকানে কোন ক্রেতাও আসছে না। এ কারণে মানবেতর জীবন যাপন করছে পরিবারটি। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, শাল্লার হবিবপুর ইউনিয়নের চরগাঁও গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ঝন্টু দাসের সঙ্গে একই গ্রামের প্রভাবশালী গোপাল দাসের জায়গা—জমি নিয়ে দুই বছর ধরে বিরোধ চলছে। গেল চার নভেম্বর গ্রাম্য মাতব্বররা ঝন্টু দাসকে এই চারাবাড়ির বিরোধ মেটাতে গ্রাম্য বিচারে ডাকেন। সেখানে ঝন্টু দাসকে মাতব্বরদের পক্ষ থেকে বলা হয়, চারাবাড়িটি কাগজপত্রে দেখা যাচ্ছে গোপাল দাসের। সুতরাং ঝন্টু দাসের বেড়া উঠাতে হবে। ঝন্টু দাস মাতব্বরদের এই সিদ্ধান্ত মানতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, এ নিয়ে আদালতে মামলা আছে। আদালত যে রায় দেবেন, সেটিই তিনি মানবেন। পরে ক্ষুব্ধ মাতব্বররা ঝন্টু দাসকে এক ঘরে রাখার সিদ্ধান্ত দেন। সঙ্গে সঙ্গে লোক পাঠিয়ে গ্রামের ৮০০ পরিবারকে জানিয়ে দেওয়া হয়— কেউ যেন ঝন্টুর বাড়িতে যাওয়া আসা না করে, তার সঙ্গে কথা না বলে, কোন আচার অনুষ্ঠানে তাকে নিমন্ত্রণ না দেয়। গ্রামের এক তরুণ জানান, গ্রাম্য সালিস বৈঠকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ঝন্টুকে মারতেও উদ্যত হয় মাতব্বরদের পক্ষের কেউ কেউ। রাত সাড়ে ১২টায় চারাবাড়িতে দেওয়া ঝন্টু দাসের বেড়ার একাংশ তুলে ফেলা হয়। পরে রাত একটায় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে দুইপক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে থানায় যেতে বলে আসে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ঝন্টু দাস বললেন, ‘চারাবাড়িটি আমার বাবার কেনা। আমরা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে সবজি চাষ করি। গোপাল দাসের পক্ষ হয়ে আমাকে গেল চার নভেম্বর রাতে গ্রামের মাতব্বররা সালিশে ডাকেন। মাতব্বর রথীন্দ্র দাস আমাকে দখলিয় জায়গা ছেড়ে দিতে বলেন। আমি তাকে জানালাম, এটা নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবে, আমি সেটি মেনে নেব। পরে সমীরণ সরকার ও প্রফল্লুু চক্রবর্তী বলেন, আদালতে রায়ে ফেলে তুমি আবার বেড়া দিয়ে রাখবে। এখন দশের সিদ্ধান্ত মানতে হবে। আমি এই সিদ্ধান্ত মানতে রাজি না হওয়ায় তারা সকলকে বলে দেন, ও যেন (ঝন্টু) ঘর থেকে বের হতে না পারে, সেটি সকলে খেয়াল রাখবেন, কেউ ওর বাড়িতে যাওয়া আসা করবেন না। আজ থেকে ঝন্টু এক ঘরে।’ রথীন্দ্র দাসের স্ত্রী মিনতি রানী দাস বললেন, আমার স্বামী অন্ধ। বাড়িতে ছোটখাটো ভূষিমালের দোকান দিয়ে সংসার চলে। এখন দশদিন ধরে দোকানেও গ্রামের কেউ আসছে না। আমার দুই মেয়ে ও ছেলে স্কুলে পড়ে, এরাও ভয়ে স্কুলে যাচ্ছে না। গোপাল দাস স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, বিরোধকৃত চারাবাড়ি খরিদ সূত্রে মালিক তার পরিবার। জোর করে ঝন্টু দাস দখল করে রেখেছেন। এজন্য তারা গ্রামের দশের সহযোগিতা চেয়েছেন। গ্রামের মাতব্বর রথীন্দ্র কুমার দাস বললেন, গোপাল দাসের চারাবাড়ি ঝন্টু দাস জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে। সম্প্রতি, ঝন্টুর ভাতিজা বিরোধকৃত জায়গায় বেড়া দিতে চাইলে গোপালের মা বাধা দেন। গ্রামের দশের দোহাই দেন গোপালের মা। পরে দশের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ঝন্টু জায়গা ছাড়তে হবে। কিন্তু ঝন্টু দশের সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন। এজন্য দশের পক্ষ থেকে তাকে একঘরে রাখার সিদ্ধান্ত দিয়ে বলা হয়েছে, আমাদের চলা আমরা চলবো, তার চলা সে চলবে। তার সন্তানদের স্কুলে যেতে কেউ বাধা দেয় নি, এ ধরণের অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন রথীন্দ্র দাস। শাল্লা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বললেন, চরগাঁওয়ের ঝন্টু দাস ও গোপাল দাসের সমস্যা এবং গ্রামের পঞ্চায়েতের হস্তক্ষেপ নিয়ে থানায় বসা হয়েছিল। একঘরে করে রাখার কথা পঞ্চায়েতের লোকজন অস্বীকার করেছেন। জায়গার বিরোধ মেটাতে বৃহস্পতিবার আবার বসা হবে।