ঢাকা রবিবার ৫ অক্টোবর, ২০২৫
ঘটনাস্থল নিয়ে দুই থানার জটিলতা অটো চালক সাকিবের লাশ উদ্ধারের চারদিন পেরিয়ে গেলেও মামলা নেয়নি পুলিশ
মোসা: শিল্পী আক্তার
নিখোঁজ জিডি মিঠাপুকুর থানায়,লাশ উদ্ধার পীরগাছা থানায়।কোন থানায় মামলা হবে তা নিয়ে ভিকটিমের পরিবার ভোগান্তির শিকার। ঘটনার চারদিন পেরিয়ে গেলেও অপরাধীরা ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। লাশের শরীর এসিড ঝলসানো , বিশেষ অঙ্গ কর্তনের পরেও পুলিশ বলছে লাশের শরীরে আঘাতের চিহ্ন নাই! ব্যাটারি বীহিন অটো পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার মিঠাপুকুরে, লাশ তিনদিন পর ভেসে উঠে আলাইকুমারী নদীতে। তদন্তে কালবিলম্ব হলে অপরাধীরা গা-ঢাকা দিতে পারে, দাবি পরিবারের।
ভিকটিমের সব ঘটনা মিঠাপুকুর থানাধীন (ওসি) পীরগাছা। লাশ যেখানে উদ্ধার হয়েছে মামলা সেখানে হবে,(ওসি) মিঠাপুকুর রংপুরের পীরগাছা এবং মিঠাপুকুর উপজেলার সিমান্তবর্তী উপজেলার আলাইকুমারী নদীতে ভেসে উঠা কিশোর অটো চালক সাকিবের (১৬) বিভর্ষ মরদেহ উদ্ধারের পরেও সিমান্ত জটিলায় চারদিনেও মামলা নেয়নি মিঠাপুকুর এবং পীরগাছা থানা পুলিশ। ভিকটিম মিঠাপুকুরের বাসিন্দা, নিখোঁজ জিডি মিঠাপুকুর থানায়, মরদেহ উদ্ধারের পূর্বে সাকিবের ভাড়ায় চালিত অটোরিকশাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় মিঠাপুকুর থানা পুলিশ উদ্ধার করায় পীরগাছা থানা পুলিশ বলছে সাকিবের মৃত্যুর ঘটনা মিঠাপুকুর থানা রিলেটেড। লাশ নদীতে ভেসে আসতেই পারে, তাই মামলাটি মিঠাপুকুর থানার আওতায়। নিহত সাকিবের পরিবার এবং স্বজনদের দাবি, মিঠাপুকুর উপজেলার ০৭ নং লতিবপুর ইউনিয়নের ঈদলপুর গ্রামের মৃত- ইলিয়াস আলীর তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে সাকিব সবার ছোট। তিন বছর পূর্বে ইলিয়াস আলী মারা গেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় সংসারের হাল ধরেন নিহত সাকিব। ভাড়ায় অটোরিকশা চালিয়ে মাকে নিয়ে থাকতেন পূরাতন বাড়িতে। যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার চালাতেন সাকিব। ঘটনার দিন গত বুধবার (২৩-আগষ্ট) দুপুর আনুমানিক তিনটার সময় তার অটোর মালিক সোহাইব পাশ্ববর্তী গ্রাম জালালপুরে ডাকেন। এরপর রাত আনুমানিক ১০ ঘটিকার সময় সোহাইব, শাকিবের বাড়িতে এসে জানায় শাকিবের ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে এবং তার অটো এ পর্যন্ত সাকিব জমা দেয়নি। পরের দিন বৃহস্পতিবার সাকিবের খোঁজ খবর না পাওয়ায় সাকিবের মা এবং অটো মালিক মিঠাপুকুর থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করেন। এরপর রাত আনুমানিক ৯ ঘটিকার সময় মিঠাপুকুর উপজেলার খোদ্দ শান্তিপুর গ্রামে রাস্তার মোড়ে স্হানীয়রা একটি পরিত্যক্ত অটো দেখতে পেয়ে মিঠাপুকুর থানা পুলিশকে খবর দিলে মিঠাপুকুর থানা পুলিশ ব্যাটারিবীহিন অটোরিকশাটি উদ্ধার করে মিঠাপুকুর থানায় নিয়ে আসে।
শুক্রবার (২৫- আগষ্ট) বিকাল আনুমানিক ৪ঃ৩০ মিনিটে মিঠাপুকুর থানার শেষ প্রান্ত এবং পীরগাছা থানার অন্তর্গত আলাইকুমারী নদীতে স্হানীয়রা একটি অজ্ঞাত লাশ দেখতে পান। লাশটি দেখতে পেয়ে উৎসুক জনতা ভিড় জমায় এবং পীরগাছা থানা পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিখোঁজ সাকিবের স্বজনরা পীরগাছা থানায় গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন। যদিও পরিবারের দাবি, লাশের পূরা শরীর এসিডে ঝলসানো ছিল। বিশেষ অঙ্গ কর্তন করা ছিলো। চেনার কোনো উপায় ছিলোনা। সাকিবের জিন্স প্যান্ট দেখে আনুমানিক তারা লাশ শনাক্ত করেন এবং পীরগাছা থানা পুলিশ পোস্ট মর্টেমের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
শনিবার সাকিবের লাশ পোস্ট মর্টেম শেষে বাড়িতে নিয়ে আসলে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। কিন্তু লাশের বিভর্ষ চেহেরা দেখে আতংকিত হয়ে উঠেন এলাকাবাসী এবং অপরাধীকে গ্রেফতারের জোর দাবি জানান। মামলা দায়ের এবং অপরাধীকে গ্রেফতারের দাবিতে সাকিবের স্বজনরা পীরগাছা এবং মিঠাপুকুর থানায় গেলেও এ রিপোর্ট লেখা অবধি সিমান্ত জটিলতায় মামলা গ্রহন করেনি পীরগাছা এবং মিঠাপুকুর থানা পুলিশ। পীরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসুমুর রহমান জানান, সাকিব মিঠাপুকুরের বাসিন্দা। জিডি এবং অটো মিঠাপুকুরে উদ্ধার করা হয়েছে। লাশ নদীতে ভেসে আসতেই পারে। আমি কি পীরগাছা থেকে গিয়ে তদন্ত করবো! মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোস্তাফিজার রহমান জানান, সাকিবের মরদেহ যে এলাকায় পাওয়া গিয়েছে সেখানে মামলা হবে, এটাই নিয়ম। শাকিবের জ্যাঠাত ভাই মোকছেদ আলী জানান, মামলার জন্য আমরা এ থানা থেকে ও থানায় ঘুরছি। শাকিব হত্যাকারীদের গ্রেফতার এবং মামলা কোথায় করবো আমাদের জানা নেই। আর কত হয়রানির শিকার হবো আমরা। অটোমালিক সোয়াইব জানান, শাকিব ভালো ছেলে। তার কোন শত্রু আছে বলে আমার জানা নেই। ঘটনার দিন তিনজন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে তার যাত্রী হিসেবে দেখা গিয়েছিল। তারা কারা ছিলো সনাক্ত করতে পারলেই ঘাতকদের চিহ্নিত করা সম্ভব। এ বিষয়ে রংপুর জেলা পুলিশ সুপার, ফেরদৌস আলী চৌধুরী আওয়ার বাংলাদেশকে জানান,মিঠাপুকুর এবং পীরগাছা থানা পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দ্রুত গতিতে অপরাধীদের গ্রেফতার করে হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে।
আপনার মতামত লিখুন :