ববির উপাচার্য ড.মো : ছাদেকুল আরেফিনের সফলতা ও
ব্যর্থতা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.মো :ছাদেকুল আরেফিন নিয়োগের চার বছর পূর্ণ করলেন। গতকাল ৫ নভেম্বর ২০২৩ (রবিবার) ববির প্রশাসন চার বছর অতিবাহিত করেছে। উপাচার্যের বিগত চার বছরের কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন করতে গিয়ে সফলতা-ব্যর্থতার উভয় দিকগুলোই এসেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুখে মুখে। রূপরেখায় শিক্ষক নিয়োগে অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক অব্যবস্থাপনা, বিশ্ববিদ্যালয়ে সম-অংশদারিত্ব নিশ্চিতকরণ, বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, শিক্ষার পরিবেশ ধরে রাখা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নানাবিধ সমস্যা নিয়ে সমালোচনা ছিল বারংবার । স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে বর্তমান উপাচার্যের স্বদিচ্ছা থাকলেও তিনি সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারেননি তবে ক্যাম্পাসে স্থিতিশীলতা, শিক্ষাগত মানোন্নয়ন, এবং সাংস্কৃতিক তৎপরতাকে ববি উপাচার্যের সাফল্য হিসেবে দেখছেন অনেকেই । ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাষ্ট্রপতির আদেশে অধ্যাপক ড.মো : ছাদেকুল আরেফিন চার বছরের জন্য উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। চার বছরের সাফল্যে ব্যর্থতা মূল্যায়নে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ আরিফ বলেন, এই উপাচার্যের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্থীতিশীল ছিল। অনিধারিত একদিন ও বন্ধ ছিল না। শিক্ষক,কর্মকতা -কর্মচারির অভ্যন্তরিন অনেক সমস্যা ছিল সেগুলো তিনি সমাধান করেছেন। শিক্ষার্থীদের সেশনজট কমানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন এবং অনেকাংশে সফল ও হয়েছেন। অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আহমেদ মিলান বলেন,চার বছর আগে উনি শেষবেলায় ফুলেল শুভেচ্ছা নিতে চেয়েছিলেন।নিঃসন্দেহে সেটা ভালো লক্ষণ ছিল। তিনি বিগত ৪বছরের কর্মকাণ্ডে কতটুকু সফল সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভেই বোঝা যায়।একটা বিশেষ শ্রেনী সেটা হয়তো মনে করেন না।বিগত ৪বছরে হাতে গোনা কয়েকটা কাজ ছাড়া তিনি পুরোপুরি ব্যর্থ।সেশনজট, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন রাজনৈতিক ঝামেলা,একাডেমিক উন্নয়ন কোনোটাই করতে পারেননি।বরং কিছু ক্ষেত্রে তিনি এসব ঝামেলা আরও বাড়িয়েছেন।রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাথে আতাত করে অনেক অনৈতিক কাজ করেও পার পেয়ে গেছেন।বশেমুরপ্রবি’র ভিসির সাথে তার সোয়াপ ডিলের ইতিহাসও রয়েছে।এছাড়াও অনেক নিয়োগ বানিজ্যের কথা শোনা যায়।সার্বিক দিক থেকে একাডেমিক ভাবে ব্যর্থ একজন ভিসি ছিলেন।নানা ধরনের অনিয়মকে তিনি প্রশ্রয় দিয়ে গেছেন।এই দোষ আমি তাকে একা দিবো না,এর জন্য দায়ী ততকালীন ভিসি ইমামুল হকের সময় যারা বড় গলায় তিনি নৈতিকতার বুলি ফুটিয়েছেন,শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সেই সকল শিক্ষকেরা। লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মোকাব্বেল শেখ বলেন- উপাচার্য ড.মো ছাদেকুল আরেফিন স্যার ২০১৯ সালের নভেম্বরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন,বিশ্ববিদ্যালয় তখন সদ্য বিদায়ী উপাচার্য এস এম ইমামুল হকের পদত্যাগ সহ বেশ কিছু যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনে টালমাটাল।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসাবে আমরা নতুন উপাচার্য পেয়ে আশার আলো দেখতে থাকি।আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি- সেশন জট মুক্ত করা,ক্যাম্পাসের পরিধি ৫১ একর থেকে ১৫০ একরে বর্ধিত করা,নতুন একাডেমিক ভবন নির্মান করা,ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বর্ধন ও ড্রেনেজ ব্যাবস্থা করা,হল ও টিএসসি তে ভর্তুকি ও খাবারের মান বৃদ্ধি করা,পরিবহন পুলে নতুন রুট ও গাড়ি বৃদ্ধি করা ও নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া। তিনি বেশ আশ্বস্ত করেছিলেন যে,এসব বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নিবেন।কিন্তু ২০২৩ সালে যখন তার কার্যকালের চারটি বছর শেষ হতে যাচ্ছে। শিক্ষার্থী হিসাবে আমাদের প্রাপ্তির হিসাব একেবারে শূন্য।ঢাবি সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ মাস্টার্স শুরু করলেও আমরা এখন পর্যন্ত স্নাতক ই শেষ করতে পারিনি।কবে নাগাদ শেষ হবে সে বিষয়ে একেবারে অনিশ্চিত।বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষার্থীদের একরকম অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভিতর রেখে তার বিদায় একজন সচেতন শিক্ষার্থী হিসাবে আমার কাছে অপ্রত্যাশিত।তিনি চাইলেই আমাদের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অনেক কাজ করতে পারতেন।সকল অপ্রাপ্তি, অভিযোগের উর্ধ্বে একজন সম্মানিত শিক্ষক হিসাবে আমি স্যারের দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ বিভাগের শিক্ষার্থী,মুহা.আনোয়ার হোসেন মনজু বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক গত চারবছর আগে ভিসি হয়ে ববিতে আসার মাধ্যমে ভিসি বিরোধী আন্দোলন সফল হয়। নতুন ভিসিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের অনেক আশা ভরসা ছিলো। অন্তত ছোট্ট এই ক্যাম্পাস এর একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন করবেন। সাংগঠনিকভাবে একাধিকবার তার কাছে দাবি নিয়ে গিয়েছিলাম। তার বক্তব্য ছিলো তার কাছে টাকা নাই। অথচ ইউজিসি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্ট করার জন্য বাজেটের টাকা ইউজিসিতে ফেরত দিয়েছেন। ভিসি হিসেবে তিনি মোটেই যোগ্য নন। স্থানীয় রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করেছেন।আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে তিনি চারটি বছর পিছিয়ে দিয়েছেন। ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ শিক্ষার্থী ফারহানা আফসার মৌরী বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছাদেকুল আরেফিন স্যারও নিজ কর্মের মাধ্যমে আজীবন চিরস্থায়ী হয়ে থাকবেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মনে। লেখালেখি ও ক্লাবের সূত্রে খুব কাছ থেকে স্যারকে পেয়েছি। স্যার সবসময় আমাকে লেখালেখির ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছেন। ক্লাবের যেকোনো কাজে স্যারের কাছে গেলে স্যার কখনো খালি হাতে ফেরত পাঠাননি। তৎক্ষনাৎ না দিতে পারলেও পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন এবং উৎসাহ দিয়েছেন। বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে যখন স্যারের প্রশংসা শুনি তখন সত্যিই গর্বে বুকটা ভরে উঠে। আসা-যাওয়া প্রকৃতিরই নিয়ম। হয়তো স্যারের চেয়ে আরও ভালো কেউ আসবেন কিন্তু স্যারের জায়গা সবসময় স্যারেরই থাকবে। আগামী দিনগুলোর জন্য স্যারের প্রতি রইলো অসংখ্য শুভকামনা।
আপনার মতামত লিখুন :