ঢাকা রবিবার ৫ অক্টোবর, ২০২৫
মহাসমাবেশে যোগ দিতে বগুড়া থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা খণ্ডখণ্ড ভাবে নানা উপায়ে ঢাকায় যাচ্ছেন। সড়কপথে বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশি ও আওয়ামী লীগের হামলার আশঙ্কায় নদী ও রেলপথ বেছে নিয়েছেন তারা। তবে এখনো কেউ বাধার সম্মুখীন হননি বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) পর্যন্ত সংগঠনটির অন্তত ৫০ হাজার নেতাকর্মী বগুড়া ছেড়েছেন বলে দাবি করেছেন জেলার সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রেফতার এড়াতে ঢাকামুখী নেতাকর্মীদের দলবদ্ধভাবে না যাওয়া, হোটেল-মেসে না থাকা, অ্যান্ড্রয়েড ফোন না ব্যবহার করাসহ নানারকম দলীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অনেক নেতাকর্মী ট্রাকে করেও ঢাকামুখী হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।
জেলার দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১২টি উপজেলা থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা মহাসমাবেশে অংশ নেবেন। এছাড়া উপজেলা ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন। আর দলীয় নেতাকর্মীরা ছাড়াও বগুড়া থেকে অন্তত ১০ হাজার সমর্থক উপস্থিত থাকবেন। এদের মধ্যে ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন গার্মেন্টস, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বগুড়া বাসিন্দারা রয়েছেন। বগুড়া জেলা বিএনপি থেকে তাদের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য আলাদা সেল গঠন করা হয়েছে।
জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগে থেকেই নেতাকর্মীরা ঢাকায় যাওয়া শুরু করেছেন। তবে অনেকে শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) ও মহাসমাবেশের দিন (শনিবার) ঢাকায় যাবেন। তাদের কেউ কেউ রাজশাহী ও সৈয়দপুর থেকে বিমানপথে যাত্রা করবেন।
সরেজমিনে শহরের ঠনঠনিয়া বাসট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, স্বাভাবিকের চেয়ে ঢাকামুখী মানুষদের চাপ অনেক বেশি। সবগুলো বাসেই যাত্রী দিয়ে পরিপূর্ণ। শুক্র ও শনিবার সকালের ঢাকামুখী সব বাসের আগাম টিকিট কাটা হয়েছে।
বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রদলের কর্মী অনিক অর্ক বলেন, ‘কাল দুপুরে বাসে রওয়ানা করবো। আগে যারা গেছেন তারা বলেছেন, কোনো অসুবিধা হয়নি। আমার সঙ্গে আরও পাঁচজন আছেন। সবাই আলাদা আলাদা সিট নিয়েছি। সবরকম সতর্কতাই অবলম্বন করছি।’
বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আবু হাসান বলেন, ‘দুপুরের দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেছিলাম। এখন (প্রতিবেদন লেখার সময়) টাঙ্গাইল পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। কিছু নেতাকর্মী সঙ্গে আছেন। দলীয় নির্দেশনা মেনে ঢাকায় যাচ্ছি।’
একতা বাস কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা এস আলম জানান, শুক্র ও শনিবারের সব সিট বুকিং হয়ে গেছে। তবে সমষ্টিগত কেউ টিকিট কাটছেন না। আর চাপ অনেক। পরিবহন বন্ধ নিয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা নেই বলেও জানান তিনি।
বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে বাসের মতো উপচেপড়া চাপ সৃষ্টি হয়েছে রেলপথেও। বগুড়ার সান্তাহার রেলওয় জংশন থেকে প্রতিদিন আটটি আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকায় যায়। বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে দুদিন আগে থেকেই দ্বিগুণ লোকজন ঢাকায় যেতে শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকামুখী কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনে সান্তাহার প্ল্যাটফর্মে আসার পরেই হুমড়ি খেয়ে লোকজন উঠতে শুরু করেন। ট্রেনের সাধারণ বগিগুলোর পাশাপাশি এসি বগিতেও একরকম তিলধারণের জায়গা ছিল না।
এ জংশন দিয়ে বগুড়ার পাশাপাশি নওঁগা জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরাও ঢাকায় যাচ্ছেন। তাদের একজন আতোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘ট্রেনে বসার সিটতো নেই। স্ট্যান্ডিং টিকিটও নেই। কাউন্টারের বাইরে অতিরিক্ত দাম দিয়ে স্ট্যান্ডিং টিকিট নিতে হয়েছে।’
সান্তাহার জংশনের স্টেশন মাস্টার হাবিবুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিনে ঢাকামুখী ট্রেনে যাত্রী চাপ বেড়েছে। তবে নির্দিষ্ট সংখ্যার টিকিটি বিক্রি করা হচ্ছে।
ট্রেন ও সড়কপথের মতো নদীপথও সরগরম। বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলা থেকে যমুনা নদী দিয়ে জামালপুর হয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। এ পথে এখন পর্যন্ত দুই উপজেলার কয়েক হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় গেছে। আরও অনেকে যাবেন বলে জানা গেছে। সারিয়াকান্দির কালিতলা ঘাট ও ধুনটের শহড়া বাড়ি ঘাট থেকে প্রথমে জামালপুরের সরিষাবাড়ী ঘটে যাচ্ছেন তারা। সেখান থেকে আবার নদীপথে ঢাকার আমিনবাজার ও সদরঘাট হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে হচ্ছে তাদের।
ধুনটের শহড়া বাড়ি ঘাটের ইজারাদার হযরত আলী বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ রিজার্ভ নৌকা নেননি। তবে জামালপুরমুখী নৌকায় যাত্রী চাপ বেড়েছে।
বগুড়া জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল বাশার বলেন, ঢাকায় মহাসমাবেশে বগুড়া থেকে বিপুল পরিমাণ নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন। তবে এখন পর্যন্ত তাদের কোনো নেতাকর্মীকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি। বাধাহীনভাবেই সবাই ঢাকায় প্রবেশ করতে পারছেন। জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক সবকিছু মনিটরিং করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বগুড়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার বলেন, কোনো রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে জেলা পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও কাজ করছে পুলিশ। গোয়েন্দা তথ্য সমন্বয় করে প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে দমন করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :