ঢাকা সোমবার ৭ই জুলাই, ২০২৫

ঢাকা সোমবার ৭ই জুলাই, ২০২৫

নওগাঁর ১১টি উপজেলায় বিজয়া দশমী প্রতিমা বিসর্জন মধ্যে দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের যমুনা নদীতে ঘিরে মহাউৎসব

উজ্জ্বল কুমার সরকার ,নওগাঁ প্রতিনিধি: প্রকাশিত: বুধবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৩, ৯:২০ পূর্বাহ্ণ

নওগাঁর ১১টি উপজেলায় বিজয়া দশমী প্রতিমা বিসর্জন মধ্যে দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের যমুনা নদীতে ঘিরে মহাউৎসব ! নওগাঁয় মণ্ডপে আনন্দে মাতে সব বয়সী মানুষ। নওগাঁয় মণ্ডপে আনন্দে মাতে সব বয়সী মানুষ। শুভ বিজয়া দশমী। এই দিনেই দেবী মর্ত্য ছেড়ে ফিরে যাবেন স্বামীগৃহ কৈলাসে। তাই মণ্ডপে মণ্ডপে আজ শুধুই বিষাদের ছায়া। উলুধ্বনি, শঙ্খ, ঘণ্টা আর ঢাকঢোলের বাজনায় থাকবে দেবী দুর্গার বিদায়ের সুর। উৎসাহ-উদ্দীপনায় মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয় শারদীয় দুর্গাপূজা। এরপর হাসি-আনন্দ আর পূজাঅর্চনার মধ্য দিয়ে কেটে গেছে চার দিন। আজ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানোর জন্য প্রস্তুত নওগাঁবাসী। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়েই শেষ হবে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা।নওগাঁর ছোট যমুনা নদীতে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হবে। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সকালে মণ্ডপে মণ্ডপে আনুষ্ঠানিক পূজা অর্চনা এবং সিঁদুর খেলার মধ্যে দিয়ে ভক্তরা মা দূর্গাকে স্ব স্ব অধিষ্ঠান থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় দেবেন। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে প্রতিমাগুলো নিজ নিজ মণ্ডপ থেকে নদীতে এনে নৌকায় তোলা হয় পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিমাবাহী এবং বিভিন্ন সংগঠন, পারিবারিক এবং গোষ্ঠীভিত্তিক নৌকাগুলো নদীতে নৌকা বাইচের মতো আনন্দ করে। উত্তরে বিজিবি ক্যাম্প এবং দক্ষিণে পালপাড়া পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে চলতে থাকে নৌকা বাইচের মতো নৌবহর। নৌকায় নৌকায় ঢাক ঢোল কাঁশর আর মাইক টেপ রেকর্ডারে গানের শব্দে মুখরিত হয়ে উঠে নদীর দুই পাড়ে জমে প্রচুর দর্শক। নদীর উভয় পার্শ্বে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার নারী পুরুষ শিশু কিশোর যুবক যুবতি সব বয়সের মানুষ এ নয়নাভিরাম দৃর্শ্য অবলোকন করেন। সন্ধ্যায় দিকে নদীর বক্ষে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এ দিকে বিজয়া দশমী উপলক্ষে শহরের প্রতিটি সড়কে, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলে আইনশৃ্ঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এর আগে গত সোমবার মহানবমীতে প্রতিটি মণ্ডপ ও মন্দিরে দেবীর বন্দনায় ছিল বিষাদের সুর। ঢাকঢোল, কাঁসর ঘণ্টাসহ বিভিন্ন বাদ্যে দেবীর বিদায়ের সুরই শোনা গেছে। শহরের এবং জেলার বিভিন্ন মন্দির-মন্ডপে দর্শনার্থীর ভিড় ছিল আগের তিন দিনের তুলনায় অনেক বেশি। অনেক মন্ডপে মানুষের ভিড় ছিল উপচে পড়া।পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, মহাষষ্ঠীর দিন দেবী দুর্গা তার সন্তান সরস্বতী, লক্ষ্মী, গণেশ এবং কার্তিককে নিয়ে মর্তে অবতরণ করেন। হিন্দু ধর্ম অনুসারে বিশ্বাস করা হয় যে দেবী দুর্গা মহাঅষ্টমীতে মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। এই জন্যেই বিশ্বাস করা হয় এই উৎসব খারাপ শক্তির বিনাশ করে শুভশক্তির বিজয়ের প্রতীক। তাই দুর্গাপূজা উপলক্ষে মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী এবং বিজয়া দশমী পালন করা হয়। প্রতিটি দিনই নিজস্ব অর্থ এবং তাৎপর্য রয়েছে।প্রতিমাগুলো বরণ করে হিন্দু নারীরা ‘সিঁদুর খেলাতে’ মেতে ওঠেন। স্বামীর মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন নারীরা নিজ কপালে সিঁদুর লাগান। সেই সিঁদুরের কিছু অংশ দিয়ে দেবীর চরণ স্পর্শ করে থাকেন। তারপর সবাই মিলে একে অপরকে সিঁদুর মাখেন। দুর্গা আগামী বছর আবার সঙ্গে করে শাখা সিঁদুর সঙ্গে নিয়ে আসবেন।জলাশয়ে বিসর্জন দেওয়ার হয় প্রতিমাগুলো। বিসর্জনের আগে শোভাযাত্রা বের হয়। নাচে- গানে, হাসি মুখে দেবীকে বিদায় জানানো হয়। ভক্তদের কষ্ট দূর করতে এ বছর দেবী দুর্গা এসেছেন ঘোড়ায় চড়ে আর মঙ্গলবার দশমীর দিন বিদায় নেবেন এই একই বাহনে। নওগাঁ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ কমিটি যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘নওগাঁ সদরে ১২১টিসহ জেলায় ৮২৫টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈষিক মহামারি করোনার পর এ বছর বর্ণিল আয়োজনে শারদীয় দূর্গা উৎসব পালন করেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এ উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে আনন্দ ছড়িয়ে পড়বে। সম্প্রতির বন্ধন অটুট হবে। পুলিশ প্রশাসন থেকে আমাদেরকে সার্বিক সহযোগীতা করছেন। এবং আজ বিজয় দশমীর মাধ্যমে সমাপ্ত হবে সবচেয়ে বড়ো এই পূজার অনুষ্ঠান।’ নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান বলেন, ‘এবারে জেলায় ৮২৩ টি মন্ডপে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুভ বিজয়া। এই উপলক্ষে শহরের ছোট যমুনা নদীতে নৌকা বহর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নদীর দুই পাশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের পুলিশ সদস্যরা নৌকা নিয়ে টহল দিচ্ছে। ডিবি পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে মোতায়েন আছে। এ ছাড়া আমরা ড্রোন দিয়ে মনিটরিং করছি। পাশাপাশি আছে সাইবার টিম। মোট কথা প্রতিমা বিসর্জন হওয়া পর্যন্ত আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। কোনো বিশৃঙ্খলা করার সুযোগ নেই।