ঢাকা মঙ্গলবার ৮ই জুলাই, ২০২৫

ঢাকা মঙ্গলবার ৮ই জুলাই, ২০২৫

বাবা হারানো সেই ফি-লি-স্তি-নি শিশুদের কথা মনে না করেন,তবে বুঝবেন আপনার ইসলামি চেতনা মরে গেছে

লুৎফুর রহমান রাকিব: প্রকাশিত: রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৩, ২:২৩ অপরাহ্ণ

আপনার কোলে বসে থাকা আপনারই শিশুর দিকে তাকিয়ে যদি বাবা হারানো সেই ফি-লি-স্তি-নি শিশুদের কথা মনে না করেন, তবে বুঝবেন আপনার ইসলামি চেতনা মরে গেছে।  ইয়াহুদী-নাসারাদের একটা সফলতা হলো তারা মিডিয়া সিন্ডিকেট করে আমাদের ব্রেইনওয়াশ করতে পেরেছে। ব্রেনটা আপনার হলেও বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল, টিভি-চ্যানেল, ফেইসবুক, ইউটিউব কিংবা টুইটারের মতো মাধ্যমগুলো দিয়ে সেটা নিয়ন্ত্রিত হয়। যেই জঞ্জাল (ঘরের শত্রু রাফিদ্বী) সুলতান সালাউদ্দীন আইয়ূবী তলোয়ারের কোপে শতচ্ছিন্ন করে আল-আকসাকে মুক্ত করেছেন, আজ সেই জঞ্জাল দিয়ে আমরা নিজের উঠোন সাফ করতে চাচ্ছি। গা-যার জন্য হৃদয় রক্তাক্ত হওয়ার মানে এই নয় যে আমরা লাখো সিরিয়ান-ইরাকি সুন্নীনিধনকারী নরপশুদের রক্তমাখা তলোয়ারের প্রশংসা করব, আর-না যেসময় অস্র, লোকবল আর উদ্ভাবনীশক্তি সঞ্চয় করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ সেসময়ে রোনাল্ডদের পেছনে হাজার কোটি টাকা ইনভেস্ট করা তাও স্রেফ পর্যটনখাতকে টার্গেট করে — এমন আহাম্মকদের পদলেহন করব। . চলমান পরিস্থিতিতে ইউটিউবে কিছু বাঙালী বক্তার কথাবার্তা শুনে ও ফেইসবুকে কিছু লেখা পড়ে মনে হলো হা-সিনা এদের পশ্চাতদেশ লাল করবার পেছনে আল্লাহর একটা হিকমত আছে, আক্বল-জ্ঞানহীনরা ইলমের এই মরুভূমিকে নাহয় সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য বানিয়ে ফেলতো। উম্মাহর নেতা হওয়ারতো দূরের কথা এসকল ভাওতাবাজরা এলাকার মেম্বার হওয়ারও যোগ্যতা রাখেনা। যাহোক, আমাকে কাল কেয়ামতের ময়দানে উমুক কী করল, না-করল তার জন্য ধরা হবেনা বরং আমি কি করলাম সেজন্য জিজ্ঞাসিত হতে হবে। সুতরাং এই ক্লান্তিলগ্নে জায়নামাযে দাঁড়িয়ে কয়ফোঁটা চোখের পানি ফেললাম, মাযলুমদের জন্য কতটুকু দু’আ করলাম, ত্রাণ তহবিল, এ্যাম্বাসী বা বিশ্বস্ত ট্রাস্টের মাধ্যমে কতটুকু আর্থিক সাহায্য পাঠালাম, কুনুতে নাজেলায় শরীক হলাম কিনা— এসবের মুহাসাবা করাটা বুদ্ধিমানের কাজ। সাময়িক পরাজয় বিজয়ের রাস্তাকে তরান্বিত করে। আল্লাহর বান্দারা কখনো অস্ত্রের বলে যুদ্ধজয়ী হয়নি, কিন্তু আগেতো আল্লাহর বান্দা হতে হবে, নাকি? চারদিকে পরিস্থিতি আপনাকে একেলা বিচলিত করে বিষয়টা এমন নয়, স্বরণ করুন সে-সময়ের কথা যখন উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তানরা বলেছিল “মাতা নাসরুল্লাহ্ অর্থাৎ আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে?!’ এন্টিওক যুদ্ধের কথা মনে আছে না? যখন সাহাবীদের বিরুদ্ধে রোমানদের পরাজয় বাদশাহ হেরাক্লিয়াসের কাছে পৌঁছাল, তখন সে তার সম্প্রদায়ের লোকদেরকে জিজ্ঞাসা করলো, “আচ্ছা, তোমরা আমাকে বলতো এই লোকগুলো যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তারা কি তোমাদের মতো মানুষ নয়?” লোকেরা বলল, “হ্যাঁ, নিশ্চয় তারা আমাদের মতোই মানুষ।” পুনরায় জিজ্ঞেস করলো, “তোমরা কি তাদের চাইতেও সংখ্যায় বেশি ছিলে না?” লোকেরা বলল, “সব যুদ্ধেই আমাদের সৈন্য তাদের চাইতে অনেকবেশি ছিলো।” আবার প্রশ্ন করলো, “তাহলে এটা কিভাবে সম্ভব তোমরা যতবারই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো ততবারই পরাজিত হও?” তখন সেখানে উপস্থিত এক জ্ঞানী ব্যক্তি বলেছিল, “আমরা তাঁদের (অর্থাৎ সাহাবাদের) বিরুদ্ধে সবসময় পরাজিত হই কারণ তাঁরা রাত জেগে সালাত আদায় করে আর দিনের বেলায় সিয়াম পালন করে। তাঁরা তাঁদের চুক্তি এবং প্রতিশ্রুতিসমূহ যথাযথভাবে রক্ষা করে, তাঁরা সৎকাজের আদেশ করে এবং অসৎকাজে নিষেধ করে, আর তাঁরা নিজেদের মধ্যে ন্যায়পরায়ণতা ও সদাচারণ বজায় রাখে। অন্যদিকে আমরা বারবার পরাজিত হই কারণ আমরা মদ পান করি, ব্যাভিচারে লিপ্ত হই, আমরা গুনাহর কাজ করি, আমরা আমাদের চুক্তিসমূহ ভঙ্গ করি, আমরা চুরি করি, অত্যাচার করি এবং অন্যায় কাজে লিপ্ত থাকি, আমরা একজন আরেকজনকে এমন কাজ করতে উৎসাহিত করি যা আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করে, আল্লাহ তা’আলা যেকাজে সন্তুষ্ট হন আমরা একজন আরেকজনকে সেই কাজগুলো করতে নিষেধ করি এবং আমরা জমীনে দুর্নীতি ও বিপর্যয় সৃষ্টি করি।” কথাগুলো শুনে হেরাক্লিয়াস বলল, “তুমি আমাকে সত্যই বলেছো।”— [আল-মুজালাসাহ ওয়া জাওয়াহির আল-ইলম:৪/৯১]। . আজকে আমাদের চরিত্র ঠিক তার উল্টো, অর্থাৎ সেযুগে যে চরিত্র ওরা লালন করত, তা আজ আমরা লালন করি। তাইতো মাশহুর কবি ইকবাল আফসোস করে বলেছিলেন: “ওয়াজা মে তুম-হো নাসারা, তু তামুদ্দুন মে হুনুদ, ইয়ে মুসলমান হ্যায়, জিনহে দেখ-কার শারমায়ে ইয়াহুদ।” . হে আল্লাহ, আমাদের মাফ কর, আমরা দু’আ আর সবর করা ছাড়া কিছুই করতে পারিনি।