ঢাকা সোমবার ৭ই জুলাই, ২০২৫
জবাব দিয়েছেন: জনাব সাইফুদ্দিন গাজি
১ঃ প্রশ্ন : ইজতেমা শুধু বাংলাদেশে কেন?
বাকি দেশ গোলাতে ইজতেমা হয় না কেন?
উত্তর : সারাবিশ্বে বিভিন্ন দেশে তাবলীগের ইজতিমা হয়। প্রতিবছর জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে কয়েকশ ইজতিমা নিয়মিত হয়ে আসছে। ঢাকার টঙ্গী ইজতিমা, পাকিস্তানের রাইবেন্ড ইজতিমাসহ আমেরিকা, ইউরোপ আফ্রিকায় বহু ইজতিমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বর্তমানে আফ্রিকার কয়েকটি দেশে জাতীয় পর্যায়ে ইজতিমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশেই কেবল ইজতিমা হয়, আপনার এ জানা নিতান্ত ভুল।
২ঃ প্রশ্ন : নবীজি, সাহাবী, তাবেয়ী, তাদের সময়ে তারা কি এ ভাবে ইজতেমা করেছে কিনা?
উত্তর : ইজতিমা মানে সভা সম্মেলন। বৃহৎ দীনী মাহফিল। নবীজির যুগেও অসংখ্য দীনী সভা সম্মেলন হয়েছে। মক্কার সাফা পাহাড়ের পাদদেশ থেকে আরম্ভ করে আরাফার ময়দানের সর্ববৃহৎ বিদায়ী সম্মেলন পর্যন্ত বহুবার বহু মজমা ও ইজতিমা করেছেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এভাবে সর্বযুগেই দীনী দাওয়াত দেওয়ার জন্য লোকজনকে একত্র করা হয়েছে, সেটাই ইজতিমা, সেটাই সম্মেলন। এটা নতুন কিছু নয়।
৩ঃ প্রশ্ন : কুরআন হাদিসে কোথায় আছে কি ইজতেমা করতে হবে?
উত্তর : দীন শেখা ও শেখানো ফরজ। কুরআন হাদীস দ্বারা সেটা প্রমাণিত। এটা কখনো একাকী হতে পারে, আবার কখনো সম্মিলিত ভাবে। অধিক পরিমাণে লোকজনকে একত্রিত করে দীনী কথা শোনানো, অতঃপর তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে দীন শেখানোর জন্য আল্লাহর রাস্তায় বের করে দেওয়া অধিক ফলদায়ক নয় কি? এটা ঠিক প্রচলিত মাদরাসায় বা মাহফিলে লোকজনকে একত্র করার মত। এতে কুরআন সুন্নাহর কোন দলীলের খেলাফ হয় বলে জানা নেই।
৪ঃ প্রশ্ন : কুরআন হাদিসে কোথায় আছে যে যারা মক্কা মদিনায় যাওয়ার সামার্থ নাই
তারা ইজতেমাই গেলে হজ্জের সওয়াব পেয়ে যাবে?
উত্তর : আসতাগফিরুল্লাহ এমন কোনো কথা তাবলীগের কোথায় বলা হয় না। না তাবলীগের কোনো কিতাবে আছে, না কোন মুরুব্বী বলেন। কেউ বলে থাকলে লোকটি কাযযাব ও মিথ্যুক। আর আপনি শুনে থাকলে ভুল শুনেছেন।
৫ঃ প্রশ্ন : কুরআন হাদিসে কোথায় আছে যে ইজতেমাই গেলে এক রাকাতে এক কুটি রাকাতের সওয়াব পাওয়া যাবে?
উত্তর : ইজতিমায় গেলে একরাকাতে কোটি কোটি সওয়াব হবে, এমন কথা তাবলীগের কোথাও বলা হয় না। হাঁ, আল্লাহর রাস্তায় গিয়ে ইবাদত করলে কোটিগুণ সওয়াব বৃদ্ধি পায়, এটা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত । তবে দীন শেখা এবং দীন প্রচারের জন্য বাড়ি ছেড়ে বের হওয়া হাদীসে বর্ণিত ‘আল্লাহর রাস্তা’ কি না, এটা নিয়ে উলামায়ে কেরামের মধ্যে মতবিরোধ আছে।
৬ঃ প্রশ্ন : ছয় উসুলে তাবলিগ কুরআন হাদিসে কোথায় আছে? হাদিসে আছে যে ইসলামের উসুল পাঁচটি।
উত্তর : অবশ্যই কুরআন হাদীস থেকেই এ ছয় উসুল সংগৃহীত, যার কোনো একটি অস্বীকার বা অবজ্ঞা করার সুযোগ কারও নেই। প্রতিটি মুসলমানের মুক্তির জন্য এ গুণগুলো জরুরি। বিজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্য উলামায়ে কেরাম মুসলমানদের সংশোধনের নিমিত্ত এ সময়ে গুণগুলোর চর্চা জরুরি মনে করেন। সেখান থেকে এটা তাবলীগের বিখ্যাত ছয়মূলনীতিরূপে গ্রহণ করা হয়েছে। এটাকে তারা ইসলামের ৬মূলনীতি বলেন না, বরং তাবলীগের উসুল বলে।
৭ঃ প্রশ্ন : মসজিদে থাকা যায়েজ আছে কি না?
উত্তর : জি, অবশ্যই জায়িয, যদি মসজিদে থাকার উদ্দেশ্য সহীহ হয় এবং আদব রক্ষা করে থাকা হয়। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে অনেক সাহাবী মসজিদে রাত যাপন করতেন। তালিবে ইলম, দাঈ, মুজা হিদ, মুসাফিরের জন্য মসজিদে থাকতে অসুবিধা নেই।
৮ঃ প্রশ্ন : নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে মসজিদের ফ্যান, লাইট ব্যবহার করা জায়েয আছে কিনা?
উত্তর : একান্ত ব্যক্তিগত প্রয়োজনে এগুলো ব্যবহার করা জায়িয নয়। ব্যবহার করে থাকলে তার মূল্য মসজিদের দিয়ে দেওয়া উচিত। তবে মসজিদের উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যশীল, যেমন ইবাদত, ইতিকাফ, তালীম, যিকির ফিকির দাওয়াতের উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থানরত ব্যক্তির জন্য মসজিদের লাইটফ্যান ব্যবহার করা জায়িয।
আপনার মতামত লিখুন :