ঢাকা রবিবার ৫ অক্টোবর, ২০২৫

ঢাকা রবিবার ৫ অক্টোবর, ২০২৫

দুর্নীতির আখড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বদলি ঠেকাতে স্বাস্থ্য দপ্তরে দৌড়ঝাপ “ডা. রোকসানা হ্যাপির”

✒ দৈনিক কলম যোদ্ধাঃ প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৪:০৬ অপরাহ্ণ

আত্রাই(নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ

নওগাঁর আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে কর্মরত ডা. রোকসানা হ্যাপি’র বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন একই কর্মস্থল বহাল থেকে নানা অপকর্ম ও দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত করেছে বদলি ঠেকাতে স্বাস্থ্য দপ্তরে দৌড়ঝাপ শুরু করেছে “ডা. রোকসানা হ্যাপি”।

ডাঃ রোকসানা হ্যাপি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পদে কর্মরত আছেন নওগাঁর আত্রাইয়ের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের তত্বাবধানে এ্যাডহক কমিটির সিলেক্শনে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে সিরাজগঞ্জ নিয়োগ পান এবং পরবর্তীতে একই ধারাবাহিকতায় আত্রাই উপজেলা ‌স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করে অদ্যাবধি কর্মরত তিনি নিয়ম লঙ্ঘন করে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে কর্মরত আছেন, যা সরকারি নিয়মানুযায়ী তিন বছরের বেশি থাকার কথা নয়।

ডা. হ্যাপি যোগদানের পরপরই করোনাকালীন সময়ে রোগীদের চিকিৎসা না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সে সময় তিনি নার্স ও অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারের বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়াও, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত চতুর্থ শ্রেণীর ১৪ জন কর্মচারীর পোশাকের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করার গুরুতর অভিযোগ আছে। জনপ্রতি ১১ হাজার টাকা উত্তোলনের জন্য তিনি ঘুষ বাবদ জনপ্রতি ৩ হাজার টাকা করে কেটে নিয়ে বাকি ৮ হাজার টাকা প্রদান করেন।
তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাছ টেন্ডার ছাড়া কেটে বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট জেনারেটর নামমাত্র মেরামত দেখিয়ে সেই খরচও নয়-ছয় করার অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক কর্মকর্তা বলেন- স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটারের মধ্যে ডা. হ্যাপি-র স্বামীর বাড়ি। তিনি তার বেকার স্বামীকে দিয়ে সব সময় খবরদারি করান। স্বামীর বিরুদ্ধে হাসপাতালের বিভিন্ন রিপেয়ারিংয়ের কাজ করানো, ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে নিজের স্বাক্ষর স্বামীকে দিয়ে করানো সহ নানা অনিয়ম ও অপকর্ম দেখে ও আমরা কিছু করতে পারিনি।তাঁর অধীনস্থ ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীদের ভয়-ভীতি দেখানো সহ চাকরি খেয়ে নেওয়ার হুমকি দিতো।
এছাড়াও, সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার কথা ও জানায় ঐ কর্মকর্তারা।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠান প্রধান তিন বছরের বেশি একই কর্মস্থলে থাকতে পারেন না। তাঁর বদলির আদেশ হওয়ার পরেও তিনি ‘অদৃশ্য শক্তির’ কারণে এখনো একই স্থানে রয়ে গেছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রথম শ্রেণির একজন কর্মকর্তা হিসেবে বদলি হলে পদ হারানোর আশঙ্কায় তিনি নানাভাবে প্রভাব খাটাচ্ছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পরও শক্তিশালী সিন্ডিকেট ব্যবহার করে স্বপদে বহাল থাকার অভিযোগ রয়েছে। তিনি বিসিএস ক্যাডার না হয়েও নিজেকে বিসিএস কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেন বলেও জানা যায়।

এ প্রসঙ্গে নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. আমিনুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন , ডা. হ্যাপির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ইতোমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আত্রাই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল মান্নান বলেন, ডা.রোকসানা হ্যাপি দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে দুর্নীতির ও অনিয়মের আখড়া বানিয়ে রেখেছেন। তাঁর যোগদানের পর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ও ঔষধ আত্মসাৎ করা হচ্ছে। চিকিৎসা নিতে আসা মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা অবহেলিত ও অপমানিত হন। তিনি অতি দ্রুত এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে অপসারণ ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় আত্রাই উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি উত্তাল মাহমুদ বলেন, একই জায়গায় দীর্ঘদিন কর্মরত থাকায় ডা.হ্যাপি বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়েছেন। বিগত সরকারের আমলে গঠিত মদদপুষ্ট তৎকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য গণমাধ্যমকর্মী, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে তিনি অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করে অঢেল সম্পদ গড়েছেন।

দৈনিক খবরের কাগজে নিউজ প্রকাশ হওয়ার পর থেকে স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. রোকসানা হ্যাপি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগাযোগ করছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কিছু কর্মকর্তা।

বিষয়টি মন্তব্য জানতে চেয়ে আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. রোকসানা হ্যাপির মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

স্থানীয় সচেতন মহল এবং ভুক্তভোগীরা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। তারা আশা করছেন, দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটন ও দোষীদের যথাযথ শাস্তির আওতায় আনা হবে।