ঢাকা রবিবার ৫ অক্টোবর, ২০২৫

ঢাকা রবিবার ৫ অক্টোবর, ২০২৫

গোবিন্দগঞ্জে সত্য প্রকাশের দায়ে সাংবাদিক লাঞ্ছিত: সন্ত্রাসীদের হামলা

✒ দৈনিক কলম যোদ্ধাঃ প্রকাশিত: রবিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৫, ১:০২ অপরাহ্ণ

এম টি আই আহাদ মাহমুদঃ গাইবান্ধা প্রতিনিধি:

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এস–এর উপজেলা প্রতিনিধি ও নিরাপদ নিউজের জেলা প্রতিনিধি মোঃ মাহমুদ হাসান নাইম এবং তার ক্যামেরাম্যান মোঃ নিয়াজ মোর্শেদ সন্ত্রাসীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। হামলাকারীরা তাদের লাঠি, সোটা ও লোহার রড দিয়ে মারধর করে নগদ টাকা, স্মার্টফোন ও ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়েছে।

ঘটনাটি ঘটে ৩০ আগস্ট ২০২৫ (শনিবার) সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার দিকে দরবস্ত ইউনিয়নের চরকতলা বাজার এলাকায়। সাংবাদিকরা জমি দলিল সংক্রান্ত অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ভিডিও ধারণ শুরু করলে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা চালায়। হামলায় নেতৃত্ব দেয়— দরবস্ত ইউনিয়নের বগুলাগাড়ী (নয়াপাড়া) গ্রামের কোরবান আলীর ছেলে মোঃ মাহাবুবুর ইসলাম, আখিরাফতেপুর গ্রামের মোঃ লিচু মিয়া, সিংজানি (কালিতলা) গ্রামের মোঃ বাপ্পী মিয়া এবং মারিয়া গ্রামের মোঃ মোত্তালেব হোসেন, সহ আরও ৫-৭ জন।

সাংবাদিক নাইম অভিযোগ করেন, “সত্য প্রকাশের জন্য তথ্য জানতে চাওয়ার অপরাধে আমাদের উপর হামলা হয়েছে। তারা প্রমাণ নষ্ট করার জন্য ক্যামেরার ফুটেজও ডিলেট করেছে।”

স্থানীয় সূত্র জানায়, হামলাকারীরা দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতের রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। উপজেলা জামায়াতের আমির আবুল হোসেন মাস্টার এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের দলের নাম ব্যবহার করে কেউ অপরাধ করলে তার দায় জামায়াত বহন করবে না। আমরা কখনো সাংবাদিক নির্যাতনকে সমর্থন করি না।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, “সাংবাদিকদের উপর এভাবে হামলা হওয়া গণতন্ত্র ও মুক্ত সাংবাদিকতার জন্য অশনিসংকেত। অপরাধীরা দ্রুত গ্রেপ্তার হোক।”
আরেকজন সচেতন নাগরিক মন্তব্য করেন, “সত্য লিখতে গেলে যদি সাংবাদিককে মার খেতে হয়, তবে সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার কোথায়?”

পুলিশের আন্তরিকতা ও উদ্যোগ:
ঘটনার পর গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে। পুলিশের একটি টিম অভিযান চালিয়ে সাংবাদিকদের ক্যামেরা থেকে ছিনিয়ে নেয়া মেমোরি কার্ড উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
গোবিন্দগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব বুলবুল ইসলাম জানান, “প্রমাণ উদ্ধারের মাধ্যমে আমরা দ্রুত দোষীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে কাজ করছি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, সাংবাদিকদের উপর হামলা, মারপিট ও সরঞ্জাম ছিনিয়ে নেওয়া গুরুতর অপরাধ। বাংলাদেশ দণ্ডবিধি অনুযায়ী—

আঘাত ও গুরুতর জখমের জন্য (ধারা ৩২৩/৩২৫/৩২৬) ১ বছর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। ছিনতাই ও চুরির জন্য (ধারা ৩৯২) সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড।

প্রমাণ নষ্টের জন্য (ধারা ২০১) ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড।

একাধিক ব্যক্তি মিলে অবৈধ সমাবেশ ও দাঙ্গা করলে (ধারা ১৪৭-১৪৯) ২ থেকে ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড।

সাংবাদিক সমাজ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে আসছে। এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াই মুক্ত সাংবাদিকতার একমাত্র রক্ষা।