ঢাকা শনিবার ৪ অক্টোবর, ২০২৫
মোঃ আফতাবুল আলম,রাজশাহী: র্যাব-৫ এর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ এবং বাহিনীর একজন এফএস (ফিল্ড স্টাফ) সদস্যকে বিতর্কিত করার অভিযোগে এক দম্পতি সংবাদ সম্মেলন করেছেন, যাদের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে মাদক মামলার আসামি হিসেবে পরিচিত লামিয়া আক্তার এই সংবাদ সম্মেলন করেন। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, লামিয়া ও তার স্বামী শাহাজানের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, একাধিক মামলা থাকা সত্ত্বেও লামিয়া তার মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সম্প্রতি র্যাব-৫ এর এফএস সদস্য এসআই স্বাধীনের নেতৃত্বে তাদের মাদক ব্যবসার ওপর গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হলে ওই দম্পতি ক্ষুব্ধ হন। স্থানীয়দের মতে, লামিয়া প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলেন, “আমি জানি স্বাধীনকে কিভাবে এখান থেকে হঠাতে হয়। আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।” এই কথোপকথনের অডিও এবং কল রেকর্ড সংরক্ষিত আছে বলেও জানা গেছে।
র্যাব-৫ সূত্র জানাযায়, তিনি র্যাবে যোগ দিয়েছেন মাত্র ছয় মাস হলো। এর মধ্যে এপ্রিল ও জুলাই মাসে তিনি শ্রেষ্ঠ এফএস নির্বাচিত হন। ওই দম্পতির সঙ্গে তার কোনো পূর্ব যোগাযোগ ছিল না। তবে, শাহাজানের কাছে অবৈধ অস্ত্রের একটি ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হওয়ার পর র্যাব তাদের ওপর নজরদারি বাড়ায়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে দম্পতি এসআই স্বাধীনকে বিতর্কিত করতে ষড়যন্ত্র শুরু করে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংবাদ সম্মেলনে লামিয়ার অভিযোগ
সংবাদ সম্মেলনে লামিয়া আক্তার র্যাব-৫ এর এফএস সদস্য এসআই স্বাধীনের বিরুদ্ধে নির্যাতন, মিথ্যা মামলার হুমকি ও হয়রানির অভিযোগ তোলেন। লামিয়ার ভাষ্যমতে, গত ৮ আগস্ট আনুমানিক রাত ১টার দিকে এসআই স্বাধীন কয়েকজনকে নিয়ে তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে এবং মাদকদ্রব্য থাকার দাবি করে। কোনো প্রমাণ ছাড়াই তার স্বামী মো: শাহাজানকে মারধর করা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। লামিয়া আরও দাবি করেন, প্রায় নয় মাস ধরে স্বাধীনের সাথে তাদের পারিবারিক সম্পর্ক ছিল এবং তার বিয়ের সময় ধার হিসেবে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন, যা ফেরত চাওয়ায় ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে হয়রানি শুরু হয়।
তবে, সংবাদ সম্মেলনেই লামিয়া স্বীকার করেন যে তিনি একসময় মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন, কিন্তু বর্তমানে ‘ভালো হয়ে গেছেন’ বলে দাবি করেন।
পুলিশ ও স্থানীয়দের বক্তব্য
লামিয়ার প্রতিবেশী রাজশাহীর বুধপাড়া এলাকার মিন্টু, নয়ন ও শামীম জানান, শাহাজান চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা হলেও তিনি ও তার স্ত্রী রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া থেকে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। তারা আরও জানান যে লামিয়ার ইয়াবা সেবনের ভিডিও একাধিকবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন থানায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। স্থানীয়রা আরও বলেন, তারা কখনোই এসআই স্বাধীনকে ওই দম্পতির বাড়ি বা এলাকায় দেখেননি এবং নিজেদের অপরাধ ঢাকতেই দম্পতি এই কৌশল অবলম্বন করেছে।
থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, লামিয়ার বিরুদ্ধে রাজশাহীর চন্দ্রিমা ও মতিহার থানায় অন্তত চারটি মাদক মামলা রয়েছে। তার স্বামী শাহাজানের বিরুদ্ধেও রাজপাড়া থানা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে একাধিক মামলা বিচারাধীন।
র্যাব সদস্যের বক্তব্য
এফএস সদস্য এসআই স্বাধীন তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগকে “সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন” বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কারণে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে এবং লামিয়া-শাহাজান দম্পতি প্রকৃতপক্ষে মাদক ব্যবসায়ী, যাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :