ঢাকা রবিবার ৫ অক্টোবর, ২০২৫
সোহানুল হক পারভেজ রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান :
রাজশাহীর তানোরে বিজ্ঞ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিরোধপূর্ণ জমিতে জোরপূর্বক পাঁকাবাড়ি নির্মাণ করছেন প্রভাবশালী প্রতিপক্ষরা। কিন্তু পুলিশ নীবর দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে। এঘটনায় সর্বমহলে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। এনিয়ে ভুক্তভোগি আমশো গ্রামের বাসিন্দা মৃত সোবহান সরকারের পুত্র মো. হুরমত আলী সরকার (৪৮) বাদি হয়ে প্রতিপক্ষের ১০ জন নামধারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাড়ি নির্মাণ বন্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এমন অভিযোগের ১০ দিনেও কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি তানোর থানা পুলিশ।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, থানাপুলিশ ম্যানেজ করে আইন আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সম্প্রতি ১৯ জুলাই হতে ২৮ জুলাই এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত স্থানীয় একদল রাজমিস্ত্রি দিয়ে দেদারসে পাঁকাবাড়ি নির্মাণ কাজ অব্যহত রেখেছেন প্রতিপক্ষের লোকজন। তবে, বিজ্ঞ আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য গত ৫ জুলাই তানোর থানার এএসআই খাইরুল ইসলাম প্রতিপক্ষকে নোটিশ প্রদান করেছেন।
নোটিশে বলা হয়েছে, চলতি ২০২৫ সালের আগামী ২৭ আগস্ট ধার্য্য তারিখ পর্যন্ত নালিশী সম্পত্তিতে প্রতিপক্ষের প্রতি বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক অস্থায়ী অর্ন্তবর্তীকালিন নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রদান করা হয়েছে। আদালতের আদেশ অব্যাহত রাখার জন্য বর্ণিত স্থানে নালিশী তপশীল বর্ণিত সম্পত্তিকে কেন্দ্র করে কোন প্রকার শান্তি-শৃংখলা ভঙ্গ মূলক কার্যক্রম পরিচালনা না করার জন্য প্রতিপক্ষগণকে আদালতের আদেশ যথাযথ ভাবে পালনের জন্য বলা হয়। কিন্তু বিজ্ঞ আদালতের আদেশ অমান্য করে এএসআই খায়রুল ইসলামের ইন্ধনে ও সাহসে প্রতিপক্ষের লোকজন নতুন করে পাঁকাবাড়ি নির্মাণ কাজ অব্যহত রেখেছেন। প্রতিপক্ষের দ্বারা ওই এএসআই প্রভাবিত হয়ে পাঁকাবাড়ি নির্মাণ কাজ বন্ধে কোন আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। যার প্রেক্ষিতে দেদারসে প্রতিপক্ষের লোকজন নতুন করে পাঁকাবাড়ি নির্মাণ কাজ অব্যহত রেখেছেন।
মামলার এজাহার ও এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে, তানোর পৌর এলাকার আমশো মৌজার আর.এস ৫৮ নম্বর খতিয়ানের রেকর্ডীয় প্রজা আরমান সরকার ও পিয়ার সরকার নামে প্রচলিত। উক্ত রেকর্ডীয় প্রজাদ্বয়ের মধ্যে আরমান সরকারের দশ আনা আর পিয়ার সরকারের নামে ছয় আনা আংশে ষোলআনা বিদ্যমান। এহেন অবস্থায় আরমান সরকার মৃত্যুর পর তার সকল ওয়ারিশগণ তানোর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গত ১৯৯০ সালের ১৮ নভেম্বর ৬৬৮৪ নম্বর বন্টননামা দলিল মূলে আব্দুস সোবহান সরকার প্রাপ্ত হন। অতপর আব্দুস সোবহান সরকারের মৃত্যুর পর মৃত পিতার ওয়ারিশ সূত্রে বাদি হুরমত আলী নিম্ন তফসলি বর্ণিত সম্পত্তির প্রকৃত মালিক বা অংশীদার হন।
হুরমত আলী বলেন, পরবর্তীতে তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি সংক্রান্তে প্রতিপক্ষের সহিত মনোমালিন্য ও ঝগড়া বিবাদ সৃষ্টি হলে তিনি বাদি হয়ে ১০ জন নামধারী প্রতিপক্ষ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চলতি বছরের গত ১৮ জুন রাজশাহীর বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর-৬৮২পি/২০২৫ (তানোর)। ধারা-১৪৪/১৪৫, ফৌজদারী কার্যবিধি, প্রেসস নং-১২৯৮। এহেন মামলার শুনানীর প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত চলতি বছরের আগামী ২৭ আগস্ট ধার্য্য তারিখ পর্যন্ত নালিসী সম্পত্তিতে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অস্থায়ী অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন। এরপরও বিরোধপূর্ণ জমিতে জোরপূর্বক প্রতিপক্ষের পাঁকাবাড়ির নির্মাণ কাজ অব্যহত রয়েছে। তবে, এরির্পোট লেখা পর্যন্ত পুলিশ শুধু নোটিশ দিয়ে দায়সারেন। কিন্তু কোন কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে উক্ত মামলা আদালতে চলমান থাকা অবস্থায় সম্প্রতি ১৯ জুলাই সকাল অনুমান ৭টা থেকে আজ ২৮ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত একই গ্রামের প্রতিপক্ষ সাইফুল (৩৩), রাশিদুল (৩৬), রেজাউল সরকার (৫৫), রাজিউন সরকার (৫০), রাজ্জাক সরকার ৫২), মান্নান সরকার (৪৮), রইচ সরকার (৩৫), ফজলু সরকার (৩২), মেজু সরকার (৪০) ও সেজু সরকার (৩৭) পেশিশক্তির বলে তফসিল বর্ণিত সম্পত্তিতে পাঁকাবাড়ির নির্মাণ কাজ করে আসছে। এমন সময় তিনি প্রতিপক্ষগণকে বাড়ি নির্মাণে বাঁধা দিয়ে নিষেধ করেন। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে মেরে ফেলার হুমকি দেন। আর তারা আইন-আদালত কোন কিছুই মানেন না বলে দম্ভোক্তি দেখান।
এনিয়ে প্রতিপক্ষ সাইফুলের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, যেখানে নতুন করে পাঁকাবাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে ওই জায়গাটি আমাদের দখলে রয়েছে। আর হুরমত আলী তাদের হয়রানি করবার জন্য আদালতে মামলা করেছেন। মামলাটি আমরা আইনগত ভাবেই মোকাবেলা করবো। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে গালিগালাজ হয়েছে। আর ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকী দেয়া কথাটি সত্য নয় বলে এড়িয়ে গেছেন তিনি।
এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তানোর থানার এএসআই খাইরুল ইসলাম জানান, তিনি উভয়পক্ষকে নোটিশের মাধ্যমে যাঁর যাঁর অবস্থানে থাকার কথা জানিয়েছেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজনকে নিষেধ করেছি। বর্তমানে সেখানে কী হচ্ছে তা তাঁর জানা নেই। তবে, তিনি প্রতিপক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হননি বলে এড়িয়ে গেছেন।
এব্যাপারে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আফজাল হোসেন বলেন, আদালতের আদেশ অমান্য করে কাজ করার ব্যাপারে এএসআই খায়রুল ইসলামকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। এরপরও তার গাফলতি দেখা গেলে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান ওসি।
আপনার মতামত লিখুন :