ঢাকা বুধবার ২৩শে জুলাই, ২০২৫
মাটি মামুন রংপুর।
গত আট বছর আগে রংপুর সিটি করপোরেশন থেকে চাকরিচ্যুত ২৫ জনকে অসাধারণ ছুটি দেখিয়ে গোপনে নিয়োগ দিয়েছেন সিটি করপোরেশনের বর্তমান প্রশাসক।
এ নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা। শুধু তাই নয়, দুটি স্মারকে এক বছরের জন্য তাদের নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হলেও সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শাখায় কর্মকর্তা, অফিস সহকারী, আয়কর কর্মকর্তা হিসেবে মাসিক ৯ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন নির্ধারণ করে দেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সাবেক মেয়রসহ অনেকে।
নিয়োগ আদেশ যাচাই করে ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত দুটি পত্রে ২৫ জনকে গোপনে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে তাদের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমাকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, চাকরিচ্যুতদের নিয়োগ দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। তবু নিজের ক্ষমতাবলে কমিটির প্রতিবেদন উপক্ষো করে তাদের নিয়োগ দেন প্রশাসক। এর মধ্যে ৮৫৪ নম্বর স্মারকে গত ১১ মার্চ ১৭ জনকে সিটি করপোরেশনের কর আদায় শাখা, ট্রেড লাইসেন্স শাখা ও প্রকৌশল বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নিয়োগ আদেশে উল্লেখ করা হয়, নিম্নে বর্ণিত কর্মচারীদের চাকরিচ্যুতিকালীন সময় অসাধারণ ছুটি হিসেবে গণ্য হবে। সেইসঙ্গে নিয়োগ পাওয়া কর্মচারীরা তাদের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করার শর্তে পৃথক পৃথকভাবে অঙ্গীকার নামা দিয়ে চাকরিতে যোগদান করবেন। অপর ৮৫৫ নম্বর স্মারকে গত ১১ মার্চ আট জনকে ট্যাক্সেশন কর্মকর্তা, অফিস সহকারী, মোটর মেকানিক, জনসংযোগ সহকারী, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, পরিচ্ছন্নতা সুপারভাইজার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের মাসিক বেতন সর্বনিম্ন আট হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা উল্লেখ করা হয়। নিয়োগ আদেশে এই আট জনেরও চাকরিচ্যুতিকালীন সময় অসাধারণ ছুটি ও মামলা প্রত্যাহার করার শর্তে পৃথক পৃথকভাবে অঙ্গীকার নামা দিয়ে চাকরিতে যোগদান করবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিটি করপোরেশনের দুজন কর্মকর্তা সাংবাদিক দের জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদের সদস্য ও সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ৩১ জনকে এক বছরের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেন। পরের বছর তাদের নিয়োগের সময় বর্ধিত না করায় চাকরি চলে যায়। এরপর ওই ৩১ জন কর্মচারী চাকরি ফিরে পেতে হাইকোর্টে মামলা করেন। আদালতে সেই মামলা এখনও চলমান। পরে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি পাঁচ বছর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে দ্বিতীয় মেয়াদে ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর মেয়র পদে পুনর্নির্বাচিত হন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে ১৯ আগস্ট দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়। এরপর রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পান বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি দায়িত্ব পেয়ে চাকরিচ্যুত ৩১ জনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের পদধারী ছয় জনকে বাদ দিয়ে ২৫ জনকে গোপনে নিয়োগ দেন। সেইসঙ্গে বিষয়টি যাতে গোপন থাকে সেজন্য নিয়োগের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং অফিস আদেশ সরিয়ে ফেলা হয় কার্যালয় থেকে। ফলে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের কাছে অনেকবার চেয়েও নিয়োগের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং অফিস আদেশ পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের প্রশাসক আইনবহির্ভূতভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আট বছর আগে চাকরিচ্যুত ২৫ জনকে গোপনে নিয়োগ দিয়েছেন। চাকরিচ্যুতির বিষয়ে তারা হাইকোর্টে মামলা করলেও আদালত কোনও আদেশ দেননি। মামলাও প্রত্যাহার করেননি। তাহলে কোন আইনে তাদের নিয়োগ দিলেন প্রশাসক। আবার বেতনও ধরলেন বেশি। এটি সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে তুঘলকি কাণ্ড। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন,ফ্যাসিস্ট সরকারের ছয় সহযোগীকে বাদ দিয়ে চাকরিচ্যুত বাকি ২৫ জনকে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ে তাদের অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। হাইকোর্টে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় ও কোনও আদেশ না দেওয়ার পরও নতুন করে নিয়োগ দেওয়া বেআইনি কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শহিদুল ইসলাম বলেন, তৎকালীন মেয়রও তো আদালতে মামলা থাকার পরও নিয়োগ দিয়েছিলেন। গোপনে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। আমি নিয়ম মেনেই কাজ করেছি।
আপনার মতামত লিখুন :