মোঃ ফরহাদুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: একজন অসহায় অটোচালক, সারাদিন যাত্রী টেনে ক্লান্ত দেহে রাতে ফিরতেন চার কন্যার মুখে হাসি ফোটাতে। সেই মানুষটির নিথর, রক্তাক্ত মরদেহ বুধবার সকালে পড়ে ছিল গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার এক রাস্তার পাশে। কে জানত, আজ আর ফিরবেন না তিনি? কে ভাবতে পেরেছিল, সন্তানদের ভবিষ্যৎ এইভাবে থেমে যাবে? ঘটনা কালিয়াকৈর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কালামপুর এলাকায়, সাহেবাবাদগামী চার রাস্তার মোড়ে রাস্তার পাশ থেকে বুধবার (৯ জুলাই) সকালে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় একটি অজ্ঞাত মরদেহ। কিছুক্ষণ পর কালিয়াকৈর থানায় ছুটে আসেন এক বিধ্বস্ত নারী, সঙ্গে তার চার ছোট মেয়ে। থানা প্রাঙ্গণে ঢুকেই চিৎকার করে ওঠেন তিনি “আমার মিজান! এ লাশ আমার স্বামীর, ওরে ডাকি আর ফিরে না কেন? নিহত মিজানুর রহমান (৩৫), গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর থানার মংলা গ্রামের মোখলেসুর রহমানের ছেলে। জীবিকা নির্বাহ করতেন অটোরিকসা চালিয়ে। চার কন্যা সন্তানের বাবা ছিলেন তিনি। মৃত মিজানুরের স্ত্রী কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, “রাতে ফোনে বলেছিল একটু দেরি হবে। তারপর আর কোনো খোঁজ পাইনি। ভেবেছিলাম, কোনো যাত্রীর সঙ্গে হয়তো দূরে গেছে। কিন্তু ভোরে খবর এলো—একটা লাশ পড়ে আছে রাস্তায়। আমি জানি না আমার মেয়েগুলারে নিয়ে এখন কী করব…” কালিয়াকৈর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন, “নিহতের শরীরে একাধিক ধারালো অস্ত্রের আঘাত পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। হত্যার পেছনে কী কারণ ছিলো তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। এলাকাবাসী বলছেন, এমন নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড সচরাচর দেখা যায় না। কে বা কারা একজন পরিশ্রমী, নিরীহ মানুষের জীবন এভাবে কেড়ে নিলো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সকলে। চারটি অবুঝ শিশু আজ বুঝে গেছে তাদের বাবা আর কখনো বাড়ি ফিরবেন না। কালিয়াকৈর থানা পুলিশ জানায়, মিজান হত্যার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :