ঢাকা শুক্রবার ২৭শে জুন, ২০২৫
সাংবাদিক মোঃ উজ্জ্বল সরকার
গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। চিকিৎসক সংকটে স্বাস্থ্যসেবার মান ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে ৫০ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও সহায়ক কর্মী না থাকায় রোগী সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদেরকে। অনেক সময়ই চিকিৎসাসেবা যথাসময়ে প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে রোগীদের রংপুর ও বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালমুখী হতে হচ্ছে। যে কারণে বাড়ছে চিকিৎসা সেবা ব্যয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ২৯ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৪ জন। বিশেষ করে অর্থোপেডিক্স, মেডিসিন, নাক,কান, গলা ও শিশু বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। এছাড়াও পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ওয়ার্ড বয় পদে শূন্যতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সালাহউদ্দিন বলেন, পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যাবিশিষ্ট। অথচ এখানে প্রতিদিন ৬০/৬৫ জন রোগীকে ভর্তি হয়। যা ধারণক্ষমতার বাইরে। আর আউটডোর এবং ইনডোর মিলে ৪০০/৪৫০ জন রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে। এত কমসংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে এই বিপুল সংখ্যক রোগীকে সেবা প্রদান করা দুরুহ হয়ে উঠেছে।” তিনি আরো বলেন “আমাদের এখানে জনবল সংকট দীর্ঘদিনের। আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার বিষয়টি জানিয়েছি। তবে এখনো পর্যাপ্ত জনবল না পাওয়ায় আমরা সীমিত জনবল দিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।”
জনবল কাঠামো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে চিকিৎসকসহ ১৬৩ জনবল দরকার। এর বিপরীতে আছেন মাত্র ১০৩ জন। হাসপাতালটিতে অন্যান্য জনবল মোটামুটি থাকলেও এমবিবিএস ডিগ্রীধারী চিকিৎসকের সংখ্যা একেবারেই কম। যেখানে ২৯ জন এমবিবিএস পাশ করা চিকিৎসক থাকার কথা তার বিপরীতে আছেন মাত্র ৫ জন। এর মধ্যে একজন আবার ডেপুটেশনে কর্মরত আছেন ঢাকার একটি হাসপাতালে। অন্যদিকে ৫ জন সুইপারের বিপরীতে আছেন মাত্র ২ জন এবং ৩ টি ওয়ার্ড বয়ের পদ থাকলেও তিনটি পদই শূণ্য রয়েছে। এতে করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সংকটও দেখা দিয়েছে।
এদিকে রোগীরা অভিযোগ করছেন, দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও তারা সেবা পান না। জরুরি বিভাগে একজন বা দুইজন চিকিৎসককে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়, যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। যথা সময়ে এবং যথা নিয়মে তারা আমাদেরদের সেবা দিতে পারছেন না।
হাসপাতালে আগত আজাদুল ইসলাম নামের একজন রোগীর স্বজন জানান, “হাসপাতালটির বাথরুমের অবস্থা খুবই খারাপ। হাসপাতালের ভিতরে দুর্গন্ধের কারণে থাকা যায় না”।
এই ব্যাপারে গাইবান্ধা জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ রফিকুজ্জামানের সাথে কথা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান,” শুধু পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সই নয়, আশে পাশের জেলাগুলোতেও ব্যাপক চিকিৎসক ও জনবল সংকট রয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত ডিজি অফিসে চাহিদা দিচ্ছি। সেই চাহিদার আলোকে দুই-একজন যোগদান করলেও তারা বেশিদিন থাকেন না। আবার এদের অনেকেই যোগদানই করেন না।” তবে এই সংকট মোকাবেলায় তিনিসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা কাজ করছেন বলে তিনি জানান।
এই ব্যাপারে খবরবাড়ি টুয়েন্টিফোর ডটকমে’র সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক মোশফিকুর রহমান মিল্টনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, “জনবল সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্যসেবায় সংকট আরও গভীর হবে। যত দ্রুত সম্ভব এই হাসপাতালে চিকিৎসকসহ অন্যান্য জনবল বাড়ানো দরকার।”
অপরদিকে পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিদ্যমান দুরাবস্থা নিয়ে তরুণ সমাজসেবক ও সংগঠক শামীম হাসানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এই হাসপাতালটিতে পলাশবাড়ীসহ সাদুল্যাপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের নাগরিকরাও সেবা গ্রহণ করে থাকে। যে কারণে হাসপাতালটিতে সব সময় রোগীর চাপ লেগেই থাকে। ২৯ জন চিকিৎসকের বিপরীতে অন্তত অর্ধেক চিকিৎসক থাকাটা জরুরী। তিনি আরো বলেন, এই সংকট কাটাতে ন্যুনপক্ষে ভারসাম্যপূর্ণ জনবল রাখা জরুরী।
পলাশবাড়ীবাসীর দাবি, দ্রুত শূন্য পদে নিয়োগ দিয়ে সেবার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করা হোক। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যকর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
আপনার মতামত লিখুন :