ঢাকা বৃহস্পতিবার ২৬শে জুন, ২০২৫
মোঃ ইউসুফ আলী, দিনাজপুর প্রতিনিধি:
বীরগঞ্জে: জরাজীর্ণ কুড়ে ঘরের ভেতরে বসে ছিলেন প্রতিবন্ধী ফাতেমা। চোখে ছিল ক্লান্তির ছাপ, কিন্তু ভেতরে ছিল এক অদম্য সাহস। দীর্ঘদিন ভিক্ষাবৃত্তির পথ পেছনে ফেলে ছোট একটি দোকান নিয়ে নতুন করে বাঁচার চেষ্টা করছেন তিনি। সম্প্রতি বাংলাদেশ সমাচার পত্রিকাসহ বিভিন্ন প্রত্রিকায় তার জীবনসংগ্রামের করুণ চিত্র উঠে আসার পর বিষয়টি আলোড়ন তোলে প্রশাসনের মধ্যে। অবশেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সমাজসেবা কর্মকর্তা নিজেই ছুটে যান সেই সংগ্রামী নারী ফাতেমা বেওয়ার ছোট্ট ঘরে।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের দামাইক্ষেত্র গ্রামের প্রতিবন্ধী ফাতেমা বেওয়ার জীবনের গল্প কোনো কাল্পনিক উপন্যাস নয়, বরং তা জীবনের কঠিন বাস্তবতা। স্বামী হারানোর পর তিন কন্যা সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন কাটানো, মানুষের দয়ায় দিন চলে যাওয়া, ভিক্ষাবৃত্তির জীবন পেছনে ফেলে দামাইক্ষেত্র গ্রামের ব্যাংক কর্মকর্তার ফয়সাল আহমেদ এর সহয়োতায় একটি ছোট দোকান দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা এসবই আজ বাস্তবতা।
সংবাদ প্রকাশের পর দুপুরে ফাতেমার বাড়িতে উপস্থিত হন বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ এবং উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম। সেখানে গিয়ে তারা সরাসরি ফাতেমার কাছ থেকে তার জীবনের সংগ্রামের কথা শোনেন, ঘরের অবস্থা ঘুরে দেখেন এবং তাৎক্ষণিক কিছু সহায়তা প্রদান করেন।
ফাতেমার হাতে তুলে দেওয়া হয় এক মাসের চাল, আটা, তেল, লবণ, চিনি ও শুকনো খাবার। শুধু তাই নয়, ফাতেমার দোকানের উন্নয়ন এবং আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডে এগিয়ে আসার জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতায় প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন প্রকল্পের সুদবিহীন ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ বলেন, ফাতেমা বেওয়ার জীবনসংগ্রাম সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। তার মতো সাহসী মানুষ সমাজে খুব কম দেখা যায়। তিনি যাতে তার দোকানটিকে আরও বড় করতে পারেন, সে জন্য উপজেলা পরিষদ ও সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে যৌথভাবে তাকে সহায়তা দেওয়া হবে। আমরা ইতোমধ্যে তাকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি এবং প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিবন্ধী ফাতেমার মতো অসহায় কিন্তু পরিশ্রমী মানুষদের জন্যই প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন প্রকল্প চালু রয়েছে। তিনি চাইলেই অল্প সুদবিহীন ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন, যা দিয়ে তিনি তার দোকানে আরও মালামাল তুলতে পারবেন।
ফাতেমা বেওয়া বলেন, আজকে আমার ঘরে ইউএনও স্যার আসছেন, সমাজসেবা স্যার আসছেন এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দের দিন। এতদিন পর মনে হচ্ছে কেউ পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। যদি দোকানটাতে আরও মাল রাখতে পারি, তাহলে আর মানুষের কাছে হাত পাততে হবে না।
এলাকাবাসীও ফাতেমার পাশে প্রশাসনের উপস্থিতি দেখে খুশি। স্থানীয় বাসিন্দা ফয়সাল আহমেদ তারেক বলেন, সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর প্রশাসন যেভাবে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমার কাছে প্রায় সাহায্যের জন্য যায় আমি তার চাহিদা মতে ঘরের বিদ্যুৎ এবং দোকানের অল্প কিছু মালামাল দিয়ে দোকান চালু করে দেই আমরা চাই, ফাতেমার মতো আরও যারা লড়ছেন, তারা যেন সহযোগিতা পান।
আপনার মতামত লিখুন :