ভিক্ষা মাইগ্যা খাই তবুও বয়স্ক ভাতা নাই ১১ অক্টোবর ২০২৩, বুধব‘মাইগ্যা (ভিক্ষা) খাই, এর লাগি আমার কথা কেউ হুনে (শুনে) না। এই দুইন্যাইত (দুনিয়ায়) আমার কেউ নাই। নিষ্ঠুর দেবদা (দেবতা) আমারে পুলা পুরি (ছেলে-মেয়ে) দেখাইয়াও লইয়া গেছে। সোয়ামী (স্বামী) মরছে ৫ বছর অইছে। তাইন (স্বামী) মরার আরও ২ বছর আগ থাকি গেরামে গেরামে মাইগ্যা (ভিক্ষা কইরা) কোনোরকম চলছি। সোয়ামী পাগল (মানসিক রোগী) ওইয়া গেছিল। তাইন রে (স্বামী) দড়ি দিয়ে ঘরের বাঁশের পালার লগে বাইনদা (বেঁধে) ভিক্ষায় যাইতাম। মাইঝে মাইঝে মাইনষের বাড়িত কাম করতাম। এখন বয়স অইছে মাইনষের বাড়িত আর কাম করতাম পারি না। বাছনের লাগি অকন পাই, ইত যে দিন খারাপ থাকে মাইনষের দুয়ারে (দরজায়) গিয়ে কইয়া দুইল্যা ভাত খাই। আমার থ্যাইক্যা ধনীরারেও মেম্বর (মেম্বার) ছিয়ারমান (চেয়ারম্যান) কততা (অনেক কিছু) দেয়, আমারে কোনতা দেয় না। ছিয়ারমান মেম্বররে বাজারও পাইলেই কই আমারে কোনতা দেও-রে-বা, তারা কয় ভোডের কাগজ (আইডি কার্ডের ফটোকপি) দিও, দিমুনে। ৩/৪ বার দিছি ছিয়ারমান মেম্বররে। একবার ঈদের চাইল দিছিল আর কোনতা আমার কপালে নাই।’ পরনের ময়লা শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে কথাগুলো বলছিলেন ৭২ বছরের হতদরিদ্র বিধবা মহিলা চানমনি দাশ। তিনি শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের শাসখাই গ্রামের মৃত সোমচাঁদ দাশের স্ত্রী। জানা যায়, স্বামী, সন্তানহীন অনাথ হতদরিদ্র চানমনি দাশ জীবিকার তাগিদে কয়েক বছর যাবৎ ভিক্ষা করছেন। তার বসতঘরও হেলে পড়েছে, এরমধ্যেই দিন কাটাচ্ছেন চানমনি দাশ। সারাদিন ভিক্ষা করে যা পান তাই দিয়ে ১০০ গ্রাম কেরোসিন নিতেই হয়। অন্যথায় অন্ধকারেই রাত কাটাতে হয়। তিনি বলেন, ‘আমার থ্যাইক্কা গরিব এই এলাকায় নাই, তারপরও মেম্বার-ছিয়ারমানের চোখে আমি পড়ি না। আমার বয়স ওইছে, এখন আটতে (হাঁটতে) কষ্ট হয়। বয়স্ক ভাতার জন্য বহুবার চেয়ারম্যান সুবল চন্দ্র দাশকে আইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়েছি, কিন্তু কাজের কাজ হয়নি।’ শাসখাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা উষা রানী দাশ বলেন, যে দিন তিনি ভিক্ষায় যেতে পারেন না আমার কাছে আসেন, আমি খাওয়াই। মাঝে মাঝে যা পারি সাহায্য করি। বেশ ক’দিন আগে আমার ওখানে এসে তিনি কাঁদতে থাকেন- কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করলে বলেন, ‘আমারে একটা বয়স্ক ভাতা কইরা দেও বোন।’ আমি পরদিন শাল্লা সদরে আমার প্রয়োজনে গেলে বিষয়টি নিয়ে সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলি। তিনি উনাকে নিয়ে যেতে বলেছেন।’ সমাজসেবা কর্মকর্তা বিশ্বপতি চক্রবর্ত্তী বলেন, এমন একজন মহিলা সম্পর্কে শিক্ষিকা উষা রানী দাশ আমাকে বলেছেন। আমি উনাকে বলেছি, আইডি কার্ডসহ উনাকে আমার অফিসে নিয়ে আসার জন্য। এ সময় তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অসহায়দের সরকার অনেকভাবে সহযোগিতা করছেন। তাকে অবশ্যই সহযোগিতা করা হবে। স্থানীয় লোকজন বলছেন এমন অসহায় একজন বৃদ্ধ মহিলার সরকারি সাহায্য জরুরি।
আপনার মতামত লিখুন :