সোহানুল হক পারভেজ রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান: রঘুশাইল, হরিরাজ, সাগরফেনা, লক্ষ্মীকাজল, কালিটেপি, রত্না, স্বর্ণা মাসুরী, নারকেল মুচি, রাধুনি পাগল, পাঙ্গাস, ঝিঙ্গাশাইল, কালজিরা, সুবাশ, বাঁশমতি, চিনি শঙ্কর, বাদশাভোগ, এক ধানে দুই চাল, জটাবাঁশ ফুল, বিন্নি। পরিবেশ বান্ধব ও সুগন্ধি এসব ধানের নাম এখন আর অনেকের মনে নেই। নতুন প্রজন্ম তো দুরের কথা প্রবীনদের অনেকের মনের পাতা থেকে হারিয়ে গেছে নামগুলো। তবে এসব ধান অনেক যত্নে আগলে রেখেছেন কৃষক জাইদুর রহমান। এসব বিলুপ্ত হওয়া ধান নতুন করে ফিরিয়ে আনতে তার নানা উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা রয়েছে। চলতি আমন মৌসুমে নিজের ক্ষেতে ১১৫ প্রকার বা জাতের ধান চাষাবাদ করেছেন তিনি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলার কয়েকজন উদ্যোগী কৃষক তার দেয়া ফ্রি বীজ নিয়ে চাষ করেছেন আরো ৩৫ প্রকার ধান। রাজশাহী জেলার বরেন্দ্র ভূমির তানোর উপজেলার দুবইল গ্রামের বাসিন্দা কৃষক জাইদুর রহমান। জাইদুর রহমান বলেন, এমন উদ্যোগী হওয়া বড় কৃতিত্ব তার বড় ভাই ইউসুফ মোল্লার। ২০২২ সালে বড় ভাই ইউসুফ মোল্লা মারা যাওয়ার পর তার বীজভান্ডারের দায়িত্ব নেন তিনি। আদর্শ কৃষক হিসেবে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন ইউসুফ মোল্লা। তার প্রচেষ্টায় বিলুপ্ত প্রায় ২৫০ জাতের বেশি ধানের বীজ তার বীজ ভান্ডারে সংরক্ষেণে আছে। এতো রকম জাতের ধান একসঙ্গে চাষাবাদ ও সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে কৃষক পর্যায়ে ইউসুফ মোল্লার বীজ ভান্ডারই প্রথম স্থানে আছেন বলে দাবি করেছেন কৃষক জাইদুর রহমান ও কৃষি কর্মকর্তারা।ব্যাক্তি উদ্যোগে এসব বিলুপ্ত ধানের বীজ দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষরণে আছে ইউসুফ মোল্লার বরেন্দ্র বীজ ভান্ডারে। ২০১২ সাল থেকে রাজশাহী, বগুড়া, দিনাজপুর সহ সারাদেশে প্রায় ৩০০ কৃষককে তিনি এসব বীজ শর্তসাপেক্ষে সবরাহ করেছেন। এছাড়া ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ঢাকায় ১০০ এর বেশি ও রাজশাহী গবেষণাগারে প্রায় ৬৫ জাতের ধান বীজ সরবারহ করেছেন। সরবরহ করা বীজের মধ্যে চলতি আমন মৌসুমে ১৫০ প্রকার বা জাতের ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে নিজের খেতে এবার ১১৫ প্রকার, একই উপজেলার ১০, বগুড়া জেলায় ১৫, নিলফামারী ১০, ঝিনাইদহ চাষ করছেন জাতের ধান চাষ হচ্ছে। সম্প্রতি সরেজমিন দুবইল গ্রামে কৃষক জাইদুর রহমানের ক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় এক একর জমিতে ১১৫ প্রকার ধান চাষাবাদ করেছেন। এক শত বা হাফ শতক করে একেক প্রকার ধান চাষ করা হয়েছে। প্রতি ক্ষেতে আলাদা আলাদা করে ধানের নাম দিয়ে সাইনবোর্ড দেয়া আছে ক্ষেতের মধ্যেই। জাইদুর রহমান জানান, পরিবেশ বান্ধব সুগন্ধি এসব ধান অল্পদিনেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরেই গত ২৫ বছর আগ থেকে বীজ সংগ্রহের কাজ করছিলেন বড় ভাই ইউসুফ মোল্লা। এখন পর্যন্ত ২৬০ এর বেশি বিভিন্ন জাতের ধান বীজ সংগ্রহ করেছেন। ২০১২ সাল থেকে ৫০টি করে জাতের ধান তিনি অল্প করে আবাদ করেন। সেই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগ্রহী কৃষকদের মাঝে বিতরণ করছেন।জাইদুর রহমান আরো জানান, যেসব কৃষকদের এসব হারানো ধানের বীজ সরবরহ করছেন তা শর্তসাপেক্ষে। তা হলো বীজের বদলে বীজ। একজন কৃষক তার কাছে ৫ কেজি বীজ নিলে ধান উৎপাদনের পরে সে আবার ৫ কেজি বীজ ফেরত দিবে। এছাড়া সংগ্রহে থাকা ১০০ প্রজাতির বেশি বীজ গাজীপুর ধান গবেষণা কেন্দ্র ও রাজশাহী ধান গবেষণা কেন্দ্রে ৬৫ রকম বীজ দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে ৭২ ঝিনাইদহ ১২ প্রকার সহ দেশে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব জাতের ধান সরবরহ করেছেন। তারা সেগুলোর বিস্তার করা নিয়ে গবেষণা করছে। বিলুপ্ত বীজ সংরক্ষণের উদ্যোগে উৎসাহ জুগাচ্ছেন স্থানীয় কৃষি সম্প্রাসারণ আর আর্থিকসহ সার্বিক সহযোগিতা করছেন বেসরকারী গবেষণা সংস্থা বারসিক। বেসরকারী গবেষণা সংস্থা বারসিকের কর্মসূচি কর্মকর্তা অমৃত সরকার বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে যেসকল বস্তু দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সেসব নিয়ে গবেষণা ও কী ভাবে ধরে রাখা যায় সে বিষয়ে কাজ করে থাকে। উদ্দেশ্য, হারিয়ে যাওয়া জিনিসগুলো নতুন প্রজ¥রা চিনতে পারে, বুঝতে পারে।জাইদুর রহমান আরো জানান, যেসব কৃষকদের এসব হারানো ধানের বীজ সরবরহ করছেন তা শর্তসাপেক্ষে। তা হলো বীজের বদলে বীজ। একজন কৃষক তার কাছে ৫ কেজি বীজ নিলে ধান উৎপাদনের পরে সে আবার ৫ কেজি বীজ ফেরত দিবে। এছাড়া সংগ্রহে থাকা ১০০ প্রজাতির বেশি বীজ গাজীপুর ধান গবেষণা কেন্দ্র ও রাজশাহী ধান গবেষণা কেন্দ্রে ৬৫ রকম বীজ দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে ৭২ ঝিনাইদহ ১২ প্রকার সহ দেশে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব জাতের ধান সরবরহ করেছেন। তারা সেগুলোর বিস্তার করা নিয়ে গবেষণা করছে। বিলুপ্ত বীজ সংরক্ষণের উদ্যোগে উৎসাহ জুগাচ্ছেন স্থানীয় কৃষি সম্প্রাসারণ আর আর্থিকসহ সার্বিক সহযোগিতা করছেন বেসরকারী গবেষণা সংস্থা বারসিক। বেসরকারী গবেষণা সংস্থা বারসিকের কর্মসূচি কর্মকর্তা অমৃত সরকার বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে যেসকল বস্তু দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সেসব নিয়ে গবেষণা ও কী ভাবে ধরে রাখা যায় সে বিষয়ে কাজ করে থাকে। উদ্দেশ্য, হারিয়ে যাওয়া জিনিসগুলো নতুন প্রজ¥রা চিনতে পারে, বুঝতে পারে।এ ধারাবাহিকতায় তানোরের দুবইল গ্রামের কৃষক ইউসুফ মোল্লা বিলুপ্ত বীজ সংগ্রের বিষয়ে আর্থিক সহ নানা ভাবে ২০১০ সাল হতে সহযোগিতা করছে বারসিক। অমৃত সরকার বলেন, ২০২২ সালে কৃষক ইউসুফ মোল্লার মৃত্যুর পর তার বীজ সংগ্রহের কাজ যেন বন্ধ না হয়ে যায় সেজন্য তার ছোট ভাই কৃষক জাইদুর রহমানকে উদ্যোগী করা হয়েছে। চলতি আমন মৌসুমে বারসিকের আর্থিক সহযোগিতায় এক একর জমি লিজ নিয়ে জাইদুর রহমানকে দেয়া হয়েছে। এতে ১১৫ রকম জাতের ধান চাষ হয়েছে। তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, কৃষক ইউসুফ মোল্লার ২৫ বছরের প্রচেষ্টায় বরেন্দ্র থেকে অনেক নামী দামি বিলুপ্তি ধানগুলো নতুন করে জীবন পেয়েছেন। সেই সাথে দেশের মধ্যে তানোর উপজেলার কৃষক হিসাবে ইউসুফ মোল্লা রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অঞ্চলের সুনাম ধরে রেখেছেন। এখন ইউসুফ মোল্লার মৃত্যুর পরে তার ভাই কৃষক জাইদুর রহমান বীজ সংগ্রহের কাজ এগিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছেন। তাতে বিলুপ্তি ধান সর্ম্পকে নতুন প্রজন্ম আরো জানতে পারবেন। এজন্য তাকে কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষে থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :