ঢাকা রবিবার ৫ অক্টোবর, ২০২৫
শুভ সাহা: টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত করের বেতকার বাড়িতে মঙ্গলবার(২৪শে সেপ্টেম্বর) দুপুরে সেনা কর্মকর্তা নির্জনের স্বজনদের আহাজারি দেখা যায়।তার এমন মর্মান্তিক আকস্মিৎ মৃত্যুর সংবাদ শুনে বাড়িতে শোকের কালো অন্ধকার নেমে আসে।নিহত সেনাকর্মকর্তা নির্জনের পরিবারের সদস্যবৃন্দ,আত্নীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও এলাকাবাসীরা গভীর কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে তার গ্রামের বাড়িতে এসেছেন বাংলাদেশ
সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।সরজমিনে জানা গেছে,নিহত সেনা কর্মকর্তা তানজিম ছারোয়ার নির্জন পাবনা ক্যাডেট কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ৮২তম দীর্ঘমেয়াদী কোর্সের সঙ্গে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি হতে(২০২২ সালের ৮ই জুন) আর্মি সার্ভিস কোরে (এএসসি) কমিশন লাভ করেন বলে জানাযায়। নিহত সেনা কর্মকর্তা নির্জনের বোন তাসনুভা ছারোয়ার সূচি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,‘গতকাল রাতে নির্জন আমাকে ফোন করে বলেছিল,আপু অক্টোবরের ১ তারিখ আমার জন্মদিন,সেদিন আমি ছুটিতে আসব,তখন আমাকে কি উপহার দিবা?তখন আমি জানতাম যে নির্জন পশুপাখি পছন্দ করে। তাই আমি নির্জনকে বলেছিলাম যে জন্মদিনে টিয়া পাখি গিফট করব। শুধু তাই নয় ফোন করে আরও বলেছিল আমাকে পিঠা খাওয়াবা কবে?আমি মাংসের পিঠা খাব।ভাইকে আর পিঠা খাওয়াতে পারলাম না।বোন সূচি আরও বলেন,আমার ভাই আগামী ডিসেম্বর মাসে ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি পেত।এজন্য সে ভালোভাবে কাজ শুরু করেছিলো।আমরা নির্জনকে বিয়ে করানোর জন্য পাত্রীও দেখা শুরু করেছিলাম।সব স্বপ্নই শেষ হয়ে গেলো। আমার ভাইয়ের স্বপ্ন পূরণ হলো না।নির্জনের মা নাজমা আক্তার খান বলেন,’ছেলে রাতে কল দিয়ে বলেছিল, মা আমি অভিযানে যাচ্ছি দোয়া করো।অভিযান শেষে করে কল দিবোনি।আমার ছেলে আর কল দিলো না।নিহত নির্জনের মা আরও বলেন,’আমার ছেলে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির বিচার দাবী করছি।নির্জনের বাবা ছারোয়ার জাহান বলেন, আজ সকালে কল আসে কক্সবাজারের চকরিয়ায় ডাকাতের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন সেনাবাহিনীর লেফট্যানেন্ট মো.তানজিম সারোয়ার নির্জন।মঙ্গলবার(২৪শে সেপ্টেম্বর)বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নির্জনের মরদেহ কক্সবাজার থেকে হেলিকপ্টারযোগে টাঙ্গাইল হেলিপ্যাডে এসে পৌঁছায়।এ সময় পুরো এলাকা ঘিরে রাখে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।এরপর নিহতের মরদেহ টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করের বেতকা এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।সেখানে নেওয়ার পর নিহতের স্বজনদের আহাজাররিতে চারপাশ ভারি হয়ে উঠে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন নিহতের মা। নিহত তানজিম সারোয়ার নির্জন করের বেতকা গ্রামের সারোয়ার জাহানের ছেলে। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক।এ সময় ঘাটাইল এরিয়ার ১৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল হুসাইন মোহাম্মদ মাসীহুর রহমান,যমুনা ক্যান্টনমেন্টের ব্রিগেডিয়ার মেজর জেনারেল মো.মামুনুর রশীদসহ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে নিহত লেফটেন্যান্ট নির্জনকে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা গার্ড অব অর্নার প্রদান করা হয়েছে।বিকেলে আসরের নামাজের পর বোয়ালী মাদরাসা মাঠে জানাজা শেষে তাকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে তথ্য সুনিশ্চিত করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :