মানুষ সৃষ্টিকর্তার নেয়ামত ও তার অনুগ্রহ ভোগ করে তাঁকে অস্বীকার করবে, তাঁর অকৃতজ্ঞ হবে এবং তাঁর প্রতি গাফেল হবে বা উদাসীন থাকবে, এ হতে পারে না। মানুষকে তার নিজ সত্তাকে জানতে হবে, তাকে তার সৃষ্টিকর্তাকে চিনতে হবে। মানুষকে জানতে হবে তার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত। যে মানুষ তার নিজ সত্তাকে চিনেছে, সে দুনিয়াকে চিনেছে, আর যে মানুষ তার রুহকে চিনেছে, সে তার সৃষ্টিকর্তাকে চিনেছে। মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি। মানুষকে আত্ম জ্ঞান, আত্ম-সংযম, আত্মশুদ্ধি, আত্ম সংস্কার ও আত্ম-বিকাশের মাধ্যমে তার নিজ সত্তাকে জানতে হবে। তাকে আরো জানতে হবে- ১. মানুষ কে ? ২. সৃষ্টিজগত কি ? ৩. মানুষসহ সমগ্র সৃষ্টি ও সৃষ্টি জগতের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কে ? ৪. সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক কি ? ৫. এক আল্লাহতে নিবেদিত একজন মুসলিমের অন্য মুসলিমের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য কি? ৬. মানুষ হিসাবে সৃষ্টি জগতের শ্রেষ্ঠ জীব অন্য মানুষ ও জীবের প্রতি তার কর্তব্য কি? আরবী (الوِلايَة، الوَلايَة بكسرة الواو وفتحها) বিলায়াত, বেলায়াত বা ওয়ালায়াত অর্থ নৈকট্য, বন্ধুত্ব বা অভিভাবকত্ব (closeness, friendship, guardianship)। ‘বেলায়াত’ অর্জনকারীকে ‘ওলী’ বা ‘ওয়ালী’ (الولى) বলা হয়। ওলী অর্থ নিকটবর্তী, বন্ধু, সাহায্যকারী, অভিভাবক ইত্যাদি। বেলায়াত ধাতু থেকে নির্গত ‘ওলী’ অথের্রই আরেকটি সুপরিচিত শব্দ ‘মাওলা’ (مولى)। ‘মাওলা’ অর্থও অভিভাবক, বন্ধু, সঙ্গী ইত্যাদি (master, protector, friend, companion)। ইসলামী পরিভাষায় ‘বেলায়াত’ ‘ওলী’ ও ‘মাওলা’ শব্দের বিভিন্ন প্রকারের ব্যবহার রয়েছে। উত্তরাধিকার আইনের পরিভাষায় ও রাজনৈতিক পরিভাষায় এ সকল শব্দ বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত। তবে বেলায়াত বা ওলী শব্দদ্বয় সর্বাধিক ব্যবহৃত (ولاية الله) ‘আল্লাহর বন্ধুত্ব’ ও (ولى الله) ‘আল্লাহর বন্ধু’ অর্থে। এই পুস্তকে আমরা ‘বেলায়াত’ বলতে এই অর্থই বুঝাচ্ছি। আরবী ‘তরীক’, ‘তরীকাহ’ ব ‘তরিকত’ শব্দের অর্থ ‘রাস্তা বা পথ। ফার্সীতে এই অর্থে ‘রাহ’ শব্দটি ব্যবহৃত। আমরা এই পুস্তকে আল্লাহর বন্ধুত্ব লাভের পথ তরিকা সম্পর্কে আলোচনা করতে চাই। একমাত্র আল্লাহর সৃষ্টি এবং একই আদমের সন্তান। তাই তারা পরস্পর ভাই ভাই। মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নাই। মানুষ তার সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে তাঁর আনুগত্য পোষণ করবে, এজন্য মহান আল্লাহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাতির নিকট নিয়মও পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ অকৃতজ্ঞ, তাই সে সহজে ভুলে যায় তার সৃষ্টিকর্তার অবদানের কথা। অতীতেও মানুষ ভুলে গেছে তার সৃষ্টিকর্তাকে বহুবার। বর্তমান বিশ্বও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব মোটামুটি চারটি শিবিরে বিভক্ত ১. নাস্তিকতাবাদে বিশ্বাসী কমিউনিষ্ট দেশসমূহ। কমিউনিষ্টগণ মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সৃষ্টি করছে ধনিক ও শ্রমিক শ্রেণী নাম দিয়ে। তারা ভেদাভেদ সৃষ্টি করছে জাতিতে জাতিতে কমিউনিষ্ট ও অকমিউনিষ্ট দেশ বলে। তারা প্রতিনিয়তই অস্বীকার করে চলছে সৃষ্টিকর্তাকে এবং তাঁর দান, অনুগ্রহ ও নেয়ামতকে। তারা তাঁর অনুগ্রহ ও নেয়ামত ভোগ করে তাঁর প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়ে উদভ্রান্তের ন্যায় ভ্রান্ত পথে পরিচালিত হচ্ছে। ২. ধনতান্ত্রিক বস্তুবাদে বিশ্বাসী পশ্চিমা দেশসমূহ। ধনতান্ত্রিক বস্তুবাদে বিশ্বাসী পশ্চিমা দেশগুলো ধর্মের নামে ধর্মব্যবসা করছে আর প্রতিনিয়তই বিশ্বমানবতার অবমাননা করে চলছে। ধনতান্ত্রিক দেশগুলোতে এক মানুষ আরেক মানুষের উপর, এক জাতি অন্য আরেক জাতির উপর অন্যায়, অত্যাচার, উৎপীড়ন ও জুলুমের পর জুলুম করে যাচ্ছে ধর্মের মুখোশ পরে। ৩. পৌত্তলিক মতবাদে বিশ্বাসী ভারতসহ অন্যান্য দেশসমূহ। পৌত্তলিক মতবাদে বিশ্বাসী দেশসমূহ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানবজাতির অবমূল্যায়ন ও অবমাননা করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বকে অহেতুক ও হেয় প্রতিপন্ন করছে ও ৪. মজলুম, অত্যাচারিত ও তৌহিদ বা একত্ববাদের অবমাননাকারী মুসলিম দেশসমূহ। তৌহিদবাদী মুসলিম জাতি সমূহ বিশ্বনবীর আদর্শ, তাহজীব ও তমুদ্দুন বেমালুম ভুলে গিয়ে অমুসলিম চিন্তা, ভাবধারা ও কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। আল্লাহর তৌহিদ বা একত্ববাদ এখন তাদের হাতেই লাঞ্ছিত, কলঙ্কিত, কলুষিত এবং কালিমাযুক্ত। প্রত্যেকটি শিবিরই এখন ভ্রান্ত পথে পরিচালিত এবং বিশ্ববিবেক ও মানবতা মূল্যবোধের অবক্ষয় চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। কোন শিবিরই বিশ্বমানব মন্ডলীকে এখন সঠিক পথ নির্দেশ দিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। এরূপ পরিস্থিতিতে বিংশ শতাব্দীর এই ক্রান্তিলগ্নে এবং বিবেক বর্ণিত বিশ্বমানব সভ্যতার এই যুগ সন্ধিক্ষণে এবং একবিংশ শতাব্দির শুভাগমনে তরীকায়ে মোহাম্মদীয়ার আদর্শ ও নীতিমালাই একমাত্র সঠিক পথের নির্দেশ দিতে পারে। নিম্নে মানবজাতির কল্যাণকল্পে তরীকায়ে মোহাম্মদীয়ার আদর্শ ও নীতিমালা প্রদত্ত হলো। এবং তবিকায় মুহাম্মাদীর আজিফা ও আমল এবং জিকির সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো। আল্লাহতালাকে ভুলে যাওয়া মানুষদেরকে আল্লাহর পরিচয় শিক্ষা দেয়া হয়েছে। মুহাম্মাদীয়া জীবনের মিশন:- জীহাদী চেতনা নিয়ে সৈয়দ আহমাদ শহীদ বেরলভী রহমাুতল্লাহি আলাইহি বীর সংগঠকরূপে গমন করতে থাকেন ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চল । মুসলমানদের ইসলামী শরীয়াতের অলোকে চরিত্র গঠনের দাওয়াতী কাজে মনোনিবেশ করেন । ইসলামী শাসন ও বিশুদ্ধ আকিদাহ প্রতিষ্ঠাই ছিল তার লক্ষ । চরিত্র সংশোধন ও শরিয়াতের আনুগত্যের জীবন পরিচালনা করতে তার দরবারে হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটতো। তারই ধারাবাহিকতায় গাইবান্ধা জেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, “নিশ্চিন্তিপুর মুহাম্মাদিয়া পাক দরবার শরীফ”। এই দরবারের মূল পরিচালক জুলফিকার রহমান বিপ্লব মুহাম্মাদী। তরীকায়-এ-মুহাম্মাদী আত্মপ্রকাশ/সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ বেরেলভী (র.): প্রথমে সূফীবাদের চার তরিকায় অর্থাৎা তিনি, চিশ্তীয়া, কাদেরিয়া, নাকশবন্দিয়া ও মুজাদ্দেদিয়ায় তরীক্বায় দীক্ষা দিয়ে পরে তাঁর মুরিদদের মুহাম্মাদীয়া তরিকায় দীক্ষা দিয়ে থাকেন । সূফীবাদ বা আধ্যাত্মিক চিন্তা ধারায় এ তরিকার কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু ছিল সমাজ সংস্কার ও জিহাদ । এ মুহাম্মাদি তরিকায় আধ্যাত্মিক জীবন ও মারিফাতের সাথে শরিয়তের আইন – কানুন প্রব
আপনার মতামত লিখুন :