ঢাকা মঙ্গলবার ৮ই জুলাই, ২০২৫

ঢাকা মঙ্গলবার ৮ই জুলাই, ২০২৫

প্রাথমিক শিক্ষার প্রতিবন্ধকতা

✒ দৈনিক কলম যোদ্ধাঃ প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১০:৫৬ অপরাহ্ণ

মোঃ আলী শেখ, মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধ :প্রাথমিক শিক্ষা হলো ব্যক্তিত্ব গঠনের প্রথম পর্যায়ে শিক্ষা। একটি মানব জীবনের শিক্ষার প্রথম ধাপ যা মানুষের মধ্যে মানুষত্বের বিকাশ ঘটায়। শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ড বলা হয়। তেমনি প্রাথমিক শিক্ষাকে, মানব জীবনের শিক্ষার মেরুদন্ড হিসেবে বিবেচনা করলেও ভুল হবে না। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষার অর্জনের মাঝেও রয়েছে নানারকম প্রতিবন্ধকতা। এই প্রাথমিক শিক্ষায় প্রতিবন্ধকতার কারণে পরবর্তীতে মানুষ তার মনুষ্যত্বের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়। যদি কেউ তার মনুষ্যত্বের পরিচয় বহন করতে চায়। প্রাথমিক শিক্ষার প্রতিবন্ধকতা দূর করে জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষাকে নিশ্চিত করতে হবে।শিক্ষার মূলভিত্তি হলো প্রাথমিক শিক্ষা, আর মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের জাতীয় অঙ্গীকার। শিক্ষা সম্পর্কে একটি সম্মক ধারনা হচ্ছে শিক্ষা মানুষের চিন্তার উৎকর্ষ সাধন ও অন্তর্নিহিত শক্তি গুলোকে বিকশিত করে। আধুনিককালে শিক্ষার ব্যবহারিক মূল্যকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। অর্থাৎ মানুষের জ্ঞানগত পরিধি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তার দক্ষতা তৈরিতে শিক্ষার ভূমিকা অপরিহার্য।একজন শিশু কীভাবে কথা বলবে, কীভাবে অন্যের সঙ্গে মতবিনিময় করবে, ভাববে ও চিন্তা করবে তা, শেখার প্রক্রিয়াকে আমরা সামাজিকরন বলি। অর্থাৎ যে প্রক্রিয়ায় একজন ব্যক্তির চিন্তা কাঠামো, জীবনবোধ ও দক্ষতা তৈরি হয় তার নাম সামাজিকরন। সামাজিকরনের একটি উল্লেখযোগ্য বাহন হলো প্রাথমিক শিক্ষা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষা শুধু একজন ব্যক্তির চিন্তা কাঠামো তৈরি করে দেয় না, বরং তার ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারন করে দেয়। শুধু পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষক, পরীক্ষা পদ্ধতি কিংবা শিক্ষার নিয়মকানুন দিয়ে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য অর্জন সম্ভব হয় না। শিক্ষার জন্য প্রয়োজন হয় আলাদা পরিবেশ, অবকাঠামো ও পারিপার্শ্বিকতা। গুনগত শিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করার জন্য শিক্ষার্থীকে যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হয়। আর সামাজিকীকরণ বা তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় তার মাতৃকোল থেকে তার পরিবার, পাড়া-প্রতিবেশী, নিকট আত্মীয়দের কাছ থেকে।
তাই নেপোলিয়ন বোনাপাৰ্ট যথার্থ বলেছেন,”তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিবো “আজ একটা বিষয় লক্ষ্যনীয় সমাজের এলিট শ্রেণির অভিভাবকেরা শহরের অভিজাত বাংলা বা ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলই তাদের প্রথম পছন্দ মনে করেন। তাদের সন্তানকে ঐসব এলিট বিদ্যাপীঠে লেখাপড়া করিয়ে তারা খানিকটা গর্ববোধ করেন। অপর দিকে ছিন্নমূল, অসহায় শিশুদের ঠাঁই হয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যা অনেকটা উদ্বেগের কারন। এছাড়াও অসুস্থ প্রতিযোগিতা গুলো সর্বত্রই আমাদের মাঝে শিক্ষা সেবায় প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে। শিশুকেশিশুদের নৈতিকতা শিক্ষা না দেয়া। শিক্ষকের অপ্রতুলতা অপর্যাপ্ততা। আদর্শবান জাতি গঠনের লক্ষে সুস্থ মেধা বিকাশ উপযোগী যে ধরনের শ্রেণি কক্ষ দরকার তা অনেক বিদ্যালয়েই অনুপস্থিত। সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক বিদ্যালয়ে বসার বেঞ্চ নেই, খেলার সামগ্রী নেই। বাংলাদেশে এখনো অনেক পরিবার দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে। ফলে তারা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ের চেয়ে জীবন জীবিকার কাজে নিয়োজিত করতেই বেশি পছন্দ করে।প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে যে বিষয়ে যে যে পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি: -শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাবী, চরিত্রবান ও যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে হবে।শুধু সিলেবাসভুক্ত পড়াশোনা না করিয়ে আদর্শভিত্তিক নীতি-নৈতিকতাসম্পন্ন মানসিকতা তৈরির পদক্ষেপ নিতে হবে। -চার বছর বয়সে স্কুলে গমন বাধ্যতামূলক করে ছয় বছর বয়স পর্যন্ত শুধু নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। ছয় বছর প্লাস হলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান শুরু করতে হবে। শিক্ষকদের পৃথক বেতন কাঠামো করে তাদের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে হবে। -ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত কমিয়ে আনতে হবে। -শিক্ষার ব্যাপারে অভিভাবকদের আরও বেশি সচেতন করতে হবে। -প্রত্যেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাসে অন্তত একদিন একজন সফল ব্যক্তিত্বকে দিয়ে ছাত্র ছাত্রীদেরকে ভবিষ্যৎ তৈরির জন্য স্বপ্ন দেখাতে হবে এবং জাতির ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। শুধু মুখস্থবিদ্যার দিকে মনোনিবেশ করার জন্য কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ না করা।পাঠ্যপুস্তকের পাঠাপাশি নিয়ানুবর্তিতা শিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করা।শিক্ষক হিসেবে নিজেকে যোগ্যতম হিসেবে গড়ে তুলে শিক্ষা দান করা।শিক্ষার ব্যাপারে অভিভাবকদের আরও বেশি সচেতন করার লক্ষ্যে নিয়মিত পিটিএ সভার আয়োজন করা।মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন শিক্ষা খাতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা।প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক ও শিক্ষা খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা মূল্যবোধ, নৈতিকতা, দেশপ্রেমযুক্ত আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষাব্যবস্থা প্রয়োজন।পর্যাপ্ত পরিমাণ খেলাধুলা ও বিদ্যালয়ে শিশুদের মনের মতো বিনোদনের ব্যবস্থা করা।মাতৃপিতৃ মমতায় শিশুদের লালন করা।বিদ্যালয়কে পরিপাটি ও পারিবারিক বাসস্থানের মতো শিশুবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা। সর্বোপরি, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিতে হবে। সব সমস্যার সমাধান হয়তো আমাদের একসাথে সম্ভব নয়, কারন সেই সক্ষমতা আমাদের নেই। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে টিকে থাকতে হলে শিক্ষার গুনগত মান বাড়াতে হবে, সে লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার কোনো বিকল্প নেই।

মোস্তাফিজুর রহমান
সহকারী শিক্ষক,

৩১ নং শংকরদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়

রাজৈর, মাদারীপুর।