আজহারুল ইসলাম সাদী, স্টাফ রিপোর্টারঃ সাতক্ষীরা সদর (২) আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মোঃ আশরাফুজ্জামান জাতীয় সংসদে সাতক্ষীরা সদরের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রপতির ভাষণকে ধন্যবাদ জানিয়ে জাতীয় সংসদে সাতক্ষীরা পৌরসভার রাস্তাঘাটের বিধ্বস্ত চিত্র, ভোমরা স্থলবন্দরের অব্যবস্থাপনা ও বৈষম্য, বিএনপি সরকারের আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া সাতক্ষীরা সুন্দরবন টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়ে যাওয়া, দেশের অর্থনীতিতে সাতক্ষীরার চিংড়ি শিল্পের গুরুত্বসহ সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর এলাকায় একটি পুলিশ ফাঁড়ি ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবির কথা তুলে ধরেন সংসদ সদস্য মোঃ আশরাফুজ্জামান। তিনি আরো বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণ বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার পরিপূর্ণ দলিল। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ১৪৩ পৃষ্ঠার ভাষণে উল্লেখ করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরপেক্ষভাবে দেশ পরিচালনা করে যাচ্ছেন। সাতক্ষীরা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের রাস্তা-ঘাট বিধ্বস্ত অবস্থায় আছে। ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে কয়েকটি ইউনিয়নে একটির সাথে আরেকটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলোর উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে। জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও লেগেছে। কিন্ত বিগত ১০বছরে সদর আসনে উল্লেখযোগ্য কোন কাজ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরার জন্য অনেক কিছু দিয়েছেন। বিগত ১০বছর যিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি বলে এখন অনেক জায়গায় মাটির রাস্তা রয়েছে। দেশের আর কোন পৌরসভায় মাটির রাস্তা আছে বলে মনে হয় না। একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা হয়ে থাকে। তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দর বাংলাদেশের স্থল বন্দরের মধ্যে তৃতীয় স্থানে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালে শ্যামনগরের ঐতিহাসিক জনসভায় ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং সেটা বাস্তবায়িত হয়ে গিয়েছে। এখন কাস্টামস্ হাউস তৈরী এবং কাস্টমস্ কমিশনার বসিয়ে যদি দেয় তাহলে যেমনিভাবে রাজস্ব আয় হবে, তেমনিভাবে সাতক্ষীরার ১০লাখ শ্রমিক নির্ভিঘে কাজ করতে পারবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সকল স্থলবন্দর যেভাবে চলে, ভোমরা স্থল বন্দরের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করে রেখে দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। মাত্র ৬৩ আইটেম নিয়ে ভোমরা স্থল বন্দর আমদানি করে থাকে। ১৯৯৬ সালে যখন এই স্থল বন্দরটি চালু হয় তখন সমস্ত মালামাল উন্মুক্ত ছিলো। কিন্তু দু:খের বিষয় আমাদের পার্শ্ববর্তী বেনাপোল বন্দর দিয়ে সব পণ্য আমদানি রপ্তানি হচ্ছে। হিলি, সোনামসজিদ বন্দর দিয়ে সব কিছু আমদানি-রপ্তানি হলেও ভোমরা দিয়ে হচ্ছে না কেন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি যে শুল্ক স্টেশন থেকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে ঘোষণা দিয়ে এসেছেন। কমিশনার বসার জায়গা হয়ে গিয়েছে, সেখানে এনবিআর আমাদের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে। এই বন্দরে সকল পণ্য উন্মুক্তর দাবী করছি। এই বন্দরে ১০হাজার শ্রমিক ও ৪ শতাধিক কর্মচারী কাজ করে। এখানে সোনালী ব্যাংকসহ ৭টি ব্যাংক রয়েছে। কিন্তু এখানে কোন পুলিশ ফাঁড়ি নেই? একটি বিজিবি ক্যাম্পের উপর নির্ভর করে এই বন্দরটি চলছে। যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভোমরা বন্দরে একটি থানা, ফায়ার স্টেশন এবং ২০ শয্যার হাসপাতালের দাবী করেন। সাতক্ষীরা সদর সংসদ মোঃ আশরাফুজ্জামান সংসদে আরো বলেন সাতক্ষীরায় চিংড়িসহ সাদা মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে, এখন থেকে প্রচুর মাছ বিদেশে রপ্তানি হয়। সাতক্ষীরায় উৎপাদিত মাছ ভোমরা বন্দর দিয়ে রপ্তানি করতে পারছি না। সেটা বেনাপোল বন্দরে নিয়ে আসতে হচ্ছে। এই বৈষম্য দুর করে ভোমরা বন্দর দিয়ে রপ্তানি করার দাবী করেন। সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলা ও খুলনার পাইকগাছা এবং কয়রা উপজেলায় মাছ যশোরে আনতে হয়। বেনাপোল বন্দরে অনেক ভিড় হওয়ার কারণে অনেক সময় এই মাছগুলো নষ্ট হয়ে যায়। সাতক্ষীরার সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলটি দেশের অন্যতম বৃহৎ মিল ছিলো, বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর মিলটি বন্ধ হয়ে যায়। এখানে ৫ হাজার শ্রমিক কাজ করতো, এই মিল এরিয়ার মধ্যে পুকুর, হাইস্কুল ও আবাশন ব্যবস্থা রয়েছে। বস্ত্র কলটি চালুর দাবী করেন। তিনি আরও বলেন, দেশের জাতীয় ক্রীড়াঅঙ্গনে সাতক্ষীরা অনেক সুনাম কুড়িয়েছে। সৌম্য, মোস্তাফিজ ও মৃত্যুঞ্জয় জাতীয় ক্রিকেটে দলে খেলছে। জাতীয় ফুটবল দলে অধিনায়ক সাবিনা, মাসুরাসহ অনেকে খেলছে। জাতীয় খোখো টিমের অধিনায়ক সাতক্ষীরার ছেলে। দ্রুততম মানবীও সাতক্ষীরা মেয়ে। শ্যুটিং চ্যাম্পিয়ন হয় সাতক্ষীরার ছেলে। তিনি আরও বলেন, খেলাধুলায় বিশ্বের সামনে দেশকে পরিচিত করে দিচ্ছি। সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি থেকে রাজস্ব এনে দিচ্ছি। সেখানে থেকে ২৫ শতাংশ জেলার পিছনে ব্যায় করলে সোনায় সোহাগা হয়ে যাবো। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে মোঃ আশরাফুজ্জামান আরও বলেন, জেলা স্টেডিয়ামের অনুমোদন দিয়েছেন সেটা যাহাতে দ্রুত কার্যকর হয় দিকে নজর দিবেন। বর্তমান যে স্টেডিয়াম আছে তার দুটি গ্যালারি খুবই ঝূকিপূর্ণ? ইতোমধ্যে একটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। তিনটি গ্যালারি নির্মাণ করা খুবই জরুরী। তিনি আরও বলেন, জাতীয় পার্টি সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, প্রতিটি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছে, আমরা নির্বাচন মুখী দল। আমাদের নেতা হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ সাহেব উপজেলা এবং জেলা চেয়ারম্যাদের যে ক্ষমতায়ন করে গিয়েছিলেন। সেই ক্ষমতায়ন পুন:রায় চালু করলে বাংলাদেশের মানুষ জনগনের শাসন পাবে। তা নাহলে আমলা তান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা থেকে যাবে।
আপনার মতামত লিখুন :