ঢাকা সোমবার ৭ই জুলাই, ২০২৫
আশিকুর রহমান রাজারহাট উপজেলা প্রতিনিধি: এক সপ্তাহ ধরে কুড়িগ্রামে মৃদু ও মাঝারি শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাওয়ায় কনকনে ঠান্ডা ও তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা যেমন ব্যাহত হয়েছে, তেমনি ক্ষতি হয়েছে নানা রকমের ফসলের। বিশেষ করে ক্ষতি হচ্ছে বোরো ধানের বীজতলা। এতে ব্যাহত হতে পাড়ে বোরো চাষাবাদে। পাশাপাশি রবিশস্যের মধ্যে শাকসবজি, আলু, পেঁয়াজ, রসুনের কোল্ড ইনজুরি ও পোকার আক্রমণে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এতে কুড়িগ্রামের উলিপুরের কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। একটি পৌরসভা ও১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়ন তিস্তা,ধরলা, দুধকুমার ব্রহ্মপুত্র নদ-নদী দিয়ে বেষ্টিত। এ মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন চরা লসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠে রয়েছে রবিশস্য। সাধারণত এসময় গম,আলু,পেঁয়াজ,রসুন, কালোজিরা, ধনিয়াসহ শীতকালীন বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি উৎপাদিত হয়।এছাড়াও সরিষা, তিল, তিসি,মুগ, মসুর, খেসারি, ছোলাসহ নানা ধরনের ও ডালবীজেরও উৎপাদন হয়ে থাকে। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, উপজেলায় চলতি বছর উপজেলায় এক হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। ৫৭০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে পেঁয়াজ। সবজি চাষ করা হয়েছে এক হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও এই মৌসুমে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ২২ হাজার ৫১০ হেক্টর জমি। কৃষকরা এক হাজার ১৪৩ হেক্টর জমি বীজতলা তৈরি করছে। এ পর্যন্ত বোরো ধান রোপণ হয়েছে দুই হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে বোরো ধানের বীজতলা ব্যপকহারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বোরো ধানের বীজতলার চারা বিবর্ণ হয়ে হলুদ ও লালচে রং ধারণ করছে। চারা রোপনের আগেই শীত ও কুয়াশা বীজতলার জন্য হুমকি হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় চিন্তায় পড়েছে কৃষকরা। গত০৩ জানুয়ারি থেকে জেলার তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে মৃদু ও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে। বোরো ধান চাষি মজিবর রহমান,জালাল মিয়া, জোবাইদুল ইসলামসহ অনেকেই জানান,যেভাবে কুয়াশা পড়ে এই কুয়াশায় বোরো ধানের বীজতলার চারা বিবর্ণ হয়ে হলুদ ও লালচে রঙের হয়েছে। চারার গ্রোথ ভালো হয় নাই। আমাদের বীজতলার পরিস্থিতি খুব খারাপ,এখন কি করবো, না করবো ভেবে পাচ্ছি না! ট্রিটমেন্ট করেও কোন কাজ হচ্ছে না। আমরা কৃষক মানুষ কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছি না।আলু চাষি সোনাউল্লাহ, নজির হোসেন, রফিকুল ইসলাম জানান, আলু ফলন ভালো হয়েছে তবে ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে আলুর গাছ মরে যাচ্ছে। শীতের তীব্রতা সহ্য করতে না পেয়ে আলুর খেতে দেখা দিয়েছে ছত্রাক জনিত পচন রোগ বালাইনাশক ওধুষ স্প্রে করেও কোন কাজ হচ্ছে না। কোল্ড ইনজুরিতে রীতিমত আলুর খেত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তিস্তা নদী বেষ্টিত পেঁয়াজ ও রসুন চাষি শাহিদুল ইসলাম,রেজাউল হক, রবিউল ইসলাম জানান, পেঁয়াজ ও রসুন বোনার পর শুরু হয় তীব্র শীত যার কারণে পাতাগুলো কুঁকরে গেছে। রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, শনিবার সকালে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী ৭ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে বিরাজ করবে। উপজেলা কৃষি অফিসার ও কৃষিবিদ মোশাররফ হোসেন বলেন, কিছুদিন থেকে ঘন কুয়াশা ও শীত বেড়ে যাওয়াতে বোরো ধানের বীজতলার চারা বিবর্ণ হয়ে হলুদ ও লালচে রঙের হলে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যারা পরামর্শ মোতাবেক কাজ করেছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এ ছাড়াও শীতের প্রকোপ থেকে আলু খেত, পেঁয়াজ ও রসুনসহ বিভিন্ন ধরনের রবিশস্য কৃষকদের পরামর্শ অব্যাহত রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :