ঢাকা সোমবার ৭ই জুলাই, ২০২৫
নাটোর জেলা প্রতিনিধ সুমি খাতুন:
কঠিন প্রশ্ন সহজেই উত্তর আমিও চাই জীবন গড়তে
আচ্ছা তোরা রাজনীতি করতে চাস কেন ? একজন একজন করে বল ।
– ভাই , আমি ইদুরের মতো বাঁচতে চাই না ।
হিদায়াত , পথের খোঁজ । কোন পথ ? কেমন সে পথ ? পিচঢালা , না মেঠো , না ডিজিটাল ? সে পথ বড় সহজ , বড় আরাম । ছোটবেলা থেকে আমাদের মাথায় পুঁজিবাদী , স্বল্পমূল্যে শ্রমসন্ধানী ’ সিস্টেম একটা কথা শিখিয়ে দিয়েছে — লাইফ ইজ নট অ্যা বেড অব রোজেজ । জীবনটা ফুলের বিছানা নয় । জীবন খুব কঠিন , টিকে থাকার জন্য প্রতিযোগিতা করতে হবে । বস্তুবাদী সমাজে বস্তু কেনার যোগ্যতা চাই , নাহলে কমফোর্ট জোনে থাকতে পারবা না । লেখাপড়া করে যে , গাড়ি – ঘোড়ায় চড়ে সে । গাড়ি – বাড়ি – নারী – কাঁড়িকাঁড়ি কড়ি – ছড়ি এগুলোর জন্য দৌড়াও , ভাগো
আরেকটা পথ আছে , কমফোর্ট জোনেঢোকার পথ , আরাম – শান্তি – সুখের পথ । কমফোর্টের জন্য যে পথে উন্নত বস্তু লাগে না , কুঁড়েঘরেই – অর্ধাহারেই – হাঁটাপায়েই সেখানে কমফোর্ট মেলে । অর্জনের প্রতিযোগিতা নেই সেপথে । শুধু আছে বিসর্জনের প্রতিযোগিতা । বস্তু ভোগের মাঝে তৃপ্তি ’ আগের ওই পথে । আর এই পথে ‘ ভোগে নয় , ত্যাগেই সুখ ’ , আসল সুখ ।
এই পথের সন্ধান পাওয়াকেই বলছি হিদায়াত , যে পথের দুধারে ফুলের মতো ফুটে থাকে সুখেরা । আমি কোন কিতাবী নীতিবাক্য বা ক্যুনিজমীয় ইউটোপিয়া বা ঠাকুরমার ঝুলির কথা বলছি না । রেগুলার শেভের আড়ালে পাকা দাড়ির গোড়ার মতো বাস্তব , কড়া মেকআপের আড়ালে প্রৌঢ়ার ভাঁজ পড়া চামড়ার মতো বাস্তব
এক পথের অস্তিত্ব জানাচ্ছি আপনাদের , যেখানে সুখের অভিনয় করে প্রতি মুহূর্তে মরতে হয় না । সে রাস্তায় ‘ দম নিলেও ঘ্রাণ পাওয়া যায় সুখের , এতটাই সস্তা সেখানে সুখ । একটা ছেলের গল্প শোনাবো আজ । ‘
ছেলেটি’র জগতটাও টিপিক্যাল মধ্যবিত্ত – সন্তানের জীবন – দর্শনে ঠাসা । পুঁজিবাদের সেবা করে নিজের কমফোর্ট জোন নিশ্চিত করতে হবে । এজন্য পুঁজিবাদের ঠিক করে দেওয়া শিক্ষাটা ভালোমতো আয়ত্ত্ব করাটা জরুরি । যেখানে ভালো বাবা , ভালো স্বামী , ভালো সন্তান কীভাবে হতে হয় — তা নেই । ভালো চাকর হয়ে কীভাবে ভালো চাকরি করা যায় , শুধু সেটা শিখলেই যথেষ্ট । এরপর বস্তু আহরণের জন্য এমনভাবে চাকরগিরি করবে , যাতে সন্তান বাপ – মাকে কাছে না পায় । বস্তুর জন্য যৌতুক চেয়ে বউ পেটাতেও না বাধে । আর , বুড়ো বাপের সম্পত্তি লিখে নিয়ে আশ্রমে পাঠিয়ে নিজের কমফোর্ট জোন নিশ্চিত করা যায় । ভালো বাবা , ভালো স্বামী , ভালো সন্তান হওয়া শেখেনি যে , শিখেছে শুধু বস্তু লাগবে নিজের কমফোর্টের জন্য গাড়ি – বাড়ি – আইফোন – বাইক । সে জগতে বস্তুই সব , বাকি সব মিথ্যে ।
ততা , দক্ষ চাকর হবার জন্য ছেলেটা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হলো । সেখানে নাকি চাকর হবার সব গুণগুলো বিকশিত হয় — মনিবের ভাষায় পটাপট কথা বলা , কো – কারিকুলার্স , সুস্থ – সবল – বেশি কর্মক্ষম চাকর তৈরি । ভালো অর্থেই বললাম । ডানপিটে ছেলেটা কঠোর নিয়মের মাঝে আবিষ্কার করে বসল এক মহাসত্য— নিয়ম ভাঙার মজা । জামাআতের সাথে মাগরিবের নামাজ পড়াটাও একটা নিয়ম ছিল সেখানে । আল্লাহ ছেলেটাকে মাফ করুন ।
আবারও ওই নিয়মের ভয়েই আইএসএসবি – তে গ্রিনকার্ড পেয়েও গেল না ছেলেটা । ভার্সিটি লাইফ এনজয় করতে হবে তো । ফ্রেন্ডস – আড্ডা – ঘোরাঘুরি – বিপরীত লিঙ্গের সান্নিধ্য — এসব ছেড়ে আর্মিতে গিয়ে যৌবন বরবাদ করার কোনো মানে হয় ? শেষমেশ স্বপ্নের ঢাবি ক্যাম্পাসে কাঙ্ক্ষিত সাবজেক্ট ( জেনেটিক্স ) না পেয়ে একপ্রকার হতাশ হয়েই ভর্তি হলো ঢাকার এক সরকারি কসাইখানায় । কাহিনি শুরু হচ্ছে এখন .
প্রথম ফোঁটা :
‘ বাবা , এদিকে আয় , দেখে যা
জি আব্ব , আসছি …
এই দ্যাখ , এই লোকটা ডাক্তার । দ্যাখ কীভাবে অন্য ধর্মগ্রন্থ থেকে রেফারেন্স দেয় । একদম মুখস্থ । শোন একটু “
তাই নাকি ? আচ্ছা লোক তো !
টিভিতে দাড়িওয়ালা , কোট – টাই পরা হালকা – পাতলা গড়নের এক লোক । স ’ উচ্চারণে একটু সমস্যা , নাম্বার ওয়ান ’ বলার সময় বুড়ো আঙুল আগে তোলে । খ্রিস্টান পাদরি যেন আজন্ম – বোবা , হিন্দু পণ্ডিত যেন পালাতে পারলে বাঁচে । ছেলেটা মুগ্ধ হয়ে দেখে আর ভাবে — আমিও তো ডাক্তারি পড়ি , আমিও তো পারি এমন করে মানুষের হিদায়াতের উসিলা হতে ।
ছেলেটা কল্পনায় স্টেজে লোকটার জায়গায় নিজেকে ভাবে । নাম্বার ওয়ান ’ বলার সময় বুড়ো আঙুল আগে দিয়ে । পটাপট বলে চলে বাইবেল – গীতা – ঋগবেদ কুরআনের চ্যাপ্টার – ভার্স নাম্বার । আমাদের ছেলেটার কুরআনের অনুবাদ পড়ার আগেই ‘ ইংরেজি একটা বাইবেল ’ আর ‘ গসপেল অব বার্নাবাস ’ শেষ হয়ে গেল । ডাউনলোড হয়ে গেল বেদের সব খণ্ডই , ‘ আফ্রিকান ধর্মগুলোর পবিত্র শ্লোক আর ‘ প্রাচীন চৈনিক ধর্মপুস্তক । ডেড সি স্কুল ’ নিয়ে দিবাস্বপ্ন দেখত , আর সুরিয়ানি ভাষায় ( আরামায়িক , ইসা আলাইহিস সালাম – এর নিজের ভাষা ) লিখত খাতার মলাটে নিজের নাম । এভাবেই চলছিল ফার্স্ট ইয়ারের সোনালি দিনগুলো ।
ভালো চাকর হবার প্রতিযোগিতা কেড়ে নিল সব । সঅঅঅব । ভয়ংকর সব বই , হােস্টেল লাইফ আর কিন্নরী হাসিগুলো ‘ আসল ’ রাস্তায় ফিরিয়ে নিল ছেলেটাকে । হঠাৎ একদিন দেখল , ভার্সিটি লাইফ যতটা হৈ – হুল্লোড় হবার কথা ছিল , অতটা আর হচ্ছে না । মেডিকেল কলেজের টিচারদের কড়া শাসন আর প্রথম ব্যাচের হম্বিতম্বিতে সব বরবাদ হচ্ছে , কিন্ডারগার্টেন বানিয়ে ফেলেছে একদম । এভাবে তো আর চলে । এই প্রেসার থেকে উত্তোরণের পথও পাওয়া গেল — ছাত্ররাজনীতি । সীনা টান টান করে হাঁটা । টিচার – সিনিয়র – জুনিয়রদের সমীহের দৃষ্টি , দাবি – আন্দোলনের অ্যাডভেঞ্চার । হুমমম , চেতনার ডিলারশিপ নিয়ে নিল ছেলেটা । কেন রাজনীতিতে আসতে চাচ্ছে , বড়ভাইয়ের এই প্রশ্নের উত্তরে ছেলেটি জবাব দিয়েছিল — ‘ ভাই , আমি ইঁদুরের মতো বাঁচতে চাই না ।
আর চেতনার সাথে একটু এসব না হলে চলে ? এসবের সাথে একটু ‘ ওসব ’ না হলেও ‘ সেসব ’ তো লাগেই । না হলে রাজনীতি জমেই না মোটে ।
আপনার মতামত লিখুন :