নিজস্ব প্রতিবেদক: এই শহরের কোলাহলে প্রতিনিয়ত হাজারো মানুষ হারিয়ে যায়। কেউ দৌড়াচ্ছে জীবিকার পেছনে, কেউবা নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় লড়ছে। কিন্তু এই ভিড়েই রয়ে যান এমন কিছু মানুষ, যাদের আমরা সহজ ভাষায় বলি—‘পাগল’। সমাজ যাদের দূরে ঠেলে দেয়, তাকিয়েও দেখে না দ্বিতীয়বার। ঠিক সেই মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোটাচ্ছেন মো. সোহেল রানা ও সাইমুন আহমেদ—এই সময়ের দুই তরুণ মানবিক সৈনিক। তাদের বয়স কম, কিন্তু হৃদয়ের পরিধি অনেক বড়। তারা নিজের হাতে চিরুনি, কাঁচি, সাবান আর নতুন কাপড় নিয়ে রাস্তায় বের হন—মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন মানুষদের খুঁজে বের করে তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন, নতুন পোশাক পরিয়ে দেন, এবং চেষ্টা করেন পরিবারে ফিরিয়ে দিতে। এই কাজের সূচনা হয় এক বৃদ্ধাকে দেখে, যার চুলের জট আর ময়লার স্তরে হারিয়ে গিয়েছিল মানবিকতা। সেই দৃশ্যই সোহেল ও সাইমুনকে নাড়া দেয়। তারা সিদ্ধান্ত নেন—নিজেদের ব্যবসার আয়ের একটি অংশ ব্যয় করবেন এসব অসহায় মানুষের জন্য। সাইমুন বলেন, “অনেকেই দেখে হাসে, কেউ ব্যঙ্গ করে। কিন্তু পরিষ্কার হওয়ার পর তাদের চোখের সেই শান্তি—কোনো ভাষায় বোঝানো যাবে না।” সোহেল যোগ করেন, “আমরা কোনো বড় সংস্থার অংশ না। নিজেদের মতো করেই চেষ্টা করি। আমাদের কিছু বন্ধু পাশে দাঁড়ায়, কিন্তু বেশিরভাগ সময় আমরা দুইজনেই মাঠে থাকি। আমাদের লক্ষ্য—এই মানুষগুলোর জীবনে একটু হলেও স্বস্তি ফেরানো।” তারা শুধু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাই করেন না, বরং শীতকালে গরম কাপড় বিতরণ করেন, মাঝে মাঝে খাবার দেন, আবার চেষ্টা করেন মানসিকভাবে অসুস্থদের পরিবার খুঁজে বের করে সেখানে ফিরিয়ে দিতে। একবার তারা এক বৃদ্ধকে পরিষ্কার করার পর ভিডিওটি আপলোড করেন তাদের ‘হিউম্যান সার্ভিস বাংলাদেশ’ ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে। ভিডিওটি ভাইরাল হয়। এরপর খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেই বৃদ্ধ একসময় ২০ বছর প্রবাসে ছিলেন। মানসিক আঘাতে তিনি রাস্তায় চলে আসেন। সোহেল ও সাইমুন তার গ্রামের ঠিকানা খুঁজে বের করে পরিবারকে খোঁজ দেন—সেই বৃদ্ধ ফিরে যান তার বাড়িতে, চোখে অশ্রুর জল নিয়ে। তাদের এই মহৎ কাজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। হাজারো মানুষ অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। অনেকেই মন্তব্য করছেন, “এদের মতো তরুণরাই দেশের আসল সম্পদ।” তারা স্বপ্ন দেখেন—একদিন গড়ে তুলবেন একটি পূর্ণাঙ্গ সংগঠন। যেখানে থাকবে মানসিকভাবে অসুস্থ ও অসহায় মানুষের জন্য সেফ হোম, কাউন্সেলিং সাপোর্ট ও নিয়মিত পরিচর্যা। শেষ কথা: মো. সোহেল রানা ও সাইমুন আহমেদ শুধু দুটি নাম নয়—তারা যেন মানবতার এক জীবন্ত প্রতীক। যারা সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত মানুষগুলোর মুখে ফিরিয়ে দিচ্ছেন জীবনের আলো। তাদের এই প্রচেষ্টা যেন প্রমাণ করে—মানবতা এখনো বেঁচে আছে।
আপনার মতামত লিখুন :