ঢাকা সোমবার ৬ অক্টোবর, ২০২৫

ঢাকা সোমবার ৬ অক্টোবর, ২০২৫

গোবিন্দগঞ্জে মেধাবী স্কুল ছাত্র সাব্বির হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

সাজাদুর রহমান সাজু,স্টাফ রিপোর্টার:  প্রকাশিত: বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫, ৭:৪৪ অপরাহ্ণ

সাজাদুর রহমান সাজু,স্টাফ রিপোর্টার:  গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের রামনাথপুর এলাকার নবম শ্রেনীর মেধাবী স্কুল ছাত্র সাব্বিরকে (১৬) অপহরণের পর নৃশংস ভাবে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে দ্রুত বিচারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী।আজ রবিবার দুপুর ১২টার দিকে গোবিন্দগঞ্জ পৌর শহরের চারমাথা মোড়ে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় ঢাকা-দিনাজপুর আঞ্চলিক সড়ক ও ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে ঘন্টাব্যাপী শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এতে দূরপাল্লার যাত্রীরা সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। এ খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানার নেতৃত্বে গোবিন্দগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ বুলবুল ইসলাম প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলে গিয়ে আসামীদের রিমান্ড আবেদনসহ দৃষ্টান্তমূলক বিচারের পদক্ষেপ গ্রহনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেয় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।এসময় শ্রমিক কল্যান ফেডারেশনের গাইবান্ধা জেলা শাখার সভাপতি সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুন্নবী প্রধান, উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ,উপজেলা বিএনপির দপ্তরপর চলতি দায়িত্বে সাবেক ছাত্রনেতা সাজাদুর রহমান সাজু,দরবস্ত ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান দুলু সাবেক ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক আইয়ুব হোসেন সহ নেতৃবৃন্দ বিচারের দাবীর সাথে একত্বত্বা প্রকাশ করেন।(১২ এপ্রিল)শনিবার বিকালে সাব্বিরের দুই বন্ধু মিলে তাকে বেড়ানোর কথা বলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার এলাকায় ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়কে তার ডিভোর্স হওয়া ভগ্নিপতি ইউনুস আলীর হাতে তুলে দেয়। তখন তার সাথে থাকা ৪/৫ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি মিলে তাকে জোরপূর্বক অপহরণ করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। সন্ধ্যায় সাব্বির বাড়িতে না ফিরলে পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় অনুসন্ধান শেষে অভিযুক্ত দুই বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে দু’জন স্বীকার করে টাকার বিনিময়ে তারা সাব্বিরকে নিয়ে গিয়ে ইউনুস আলীর হাতে তুলে দিয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় অভিযুক্ত দু’জনকে আটক করে রাতে থানায় খবর দিয়ে তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। গত রবিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে সাব্বিরের পিতা মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানায় অভিযুক্ত ৩ জনসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে একটি অপহরন মামলা দায়ের করেন। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার এলাকায় টয়লেটের পরিত্যক্ত কুপ থেকে সাব্বিরের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম জানান, সাব্বিরকে অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১২ এপ্রিল রাতে রবিউল ইসলাম (১৮) ও আব্দুল আলীম (১৮) কে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা সাব্বিরকে অপহরণ করার বিষয়টি স্বীকার করেন। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কবিরুল ইসলাম (২০) কে গ্রেফতার করা হয়। পরে ঘটনার সাথে জড়িত থাকা প্রধান আসামী ইউনুস আলী (৩৫) কে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে র‍্যাব।আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাব্বির হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবিতে গাইবান্ধা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দরবস্ত রামনাথপুর এলাকার বাসিন্দারা প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিশুবাড়ি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে চত্বরে জড়ো হতে শুরু করেন। পরে তাঁরা সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সাব্বিরের হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে নানা স্লোগান দিয়ে গোবিন্দগঞ্জ শহরের দিকে আসতে থাকে। প্রায় দুই ঘণ্টা পর তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গোবিন্দগঞ্জ পৌর শহরের চারমাথা মোড়ে এসে মহাসড়কে অবস্থান নেন।এ সময় বিক্ষোভকারীরা সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। তাঁরা হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় শহরজুড়ে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে। এতে বাজারে কেনাকাটা করতে আসা লোকজন সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা সেখানে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। উপজেলা প্রশাসন তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিলে তাঁরা মহাসড়ক ছেড়ে যান। দুপুর একটার পরে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। বিক্ষোভকারীরা জানান, অপহরণের ৩ দিন পর সাব্বিরের মরদেহ পাওয়া গেছে। আসামীরা শুধু সাব্বিরকে হত্যাই করেনি, তাকে নির্মমভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যার পরে তার হাত-পা ভেঙ্গে টয়লেটের কুপে ফেলে দিয়ে মাথায় পাথর চাপা দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা যেন আর কেউ ঘটানোর সাহস না করতে পারে, এ জন্য তাঁরা অপহরণ ও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান। গাইবান্ধা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) নিশাত এ্যঞ্জেলা সাংবাদিকদের জানান, স্কুল ছাত্র সাব্বির হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনায় অন্য কোনো ব্যক্তির সম্পৃক্ততা পেলে তাঁকেও আইনের আওতায় আনা হবে।