ঢাকা রবিবার ৫ অক্টোবর, ২০২৫

ঢাকা রবিবার ৫ অক্টোবর, ২০২৫

বাংলার বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার ও অভিনেতা সুভাষ দত্তের শুভ জন্মদিন

ডেস্ক নিউজ প্রকাশিত: শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১০:০৫ অপরাহ্ণ

উজ্জ্বল কুমার সরকারঃ আজ ০৯ ফেব্রুয়ারি বিশিষ্ট অভিনেতা ও চলচ্চিত্রকার সুভাষ দত্তের জন্মদিন। সুভাষ দত্ত৷ একজন খ্যাতিমান কৌতুক অভিনেতা- বিশিষ্ট পরিচালক -প্রযোজক -চিত্রনাট্যকার ও শিল্পনির্দেশক । বাংলাদেশের সেরা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে অন্যতম সুভাষ দত্ত।

ষাটের দশক থেকে বাংলা চলচ্চিত্র জগতের তিনি অতিপরিচিত ও জনপ্রিয় মুখ। সুভাষ দত্ত জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরের মুনশিপাড়ায়, মামা বাড়িতে।
তার পৈতৃক বাসস্থান বগুড়া জেলার চকরতি গ্রামে। শৈশব কৈশোর কাল থেকেই ব্যতিক্রম স্বভাবের মানুষ ছিলেন সুভাষ দত্ত। নাটক গান, আবৃত্তি, অভিনয় পছন্দ করতেন খুব।
এরই ধারাবাহিকতায় একদিন পাড়ি জমালেন ভারতের বম্বে বর্তমান মুম্বাই শহরে। চলচ্চিত্র নির্মাণের কৌশল শিখতে গিয়ে পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিকে একটি ছায়াছবির পাবলিসিটির ষ্টুডিওতে মাত্র ত্রিশটাকা মাসিক বেতনে কাজ শুরু করেন তিনি।
মনের আকাঙ্খা পরিপুরণ না হওয়ায় ১৯৫৩ সালে ভারত থেকে ঢাকায় ফিরে যোগ দেন প্রচার সংস্থা এভারগ্রিন-এ। এরপর তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ করেন চলচ্চিত্রের পোস্টার আঁকার কাজের মাধ্যমে।
১৯৫৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ দেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর পোস্টার ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন তিনি।
সুভাষ দত্তের ভেতর অভিনয় প্রতিভা দেখে ১৯৫৮ সালে চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম এর ‘এ দেশ তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে একজন দুষ্ট নায়েব (কানুলাল) এর ভূমিকায় অভিনয় করার সুযোগ দেন তিনি। এটি মুক্তি পায় ১৯৫৯ সালের ১ জানুয়ারি।
এরপর ঢাকাই চলচ্চিত্রে তিনি কৌতুকাভিনেতা হিসেবে অভিনয় করে দর্শক মহলে প্রচুর সমাদৃত ও প্রশংসা অর্জন করেন সুভাষ দত্ত।
‘মাটির পাহাড়’ চলচ্চিত্রে আর্ট ডিরেকশনের মাধ্যমে তার পরিচালনা জীবন শুরু।
১৯৬৪ সালে মুক্তি পায় তাঁর পরিচালনায় প্রথম চলচ্চিত্র ‘সুতরাং’।এই ছবিতে নায়ক হিসেবে তিনি অভিনয় করেন সেই সময়কার নবাগতা অভিনেত্রী কবরী’র বিপরীতে।
১৯৬৫ সালে ফ্রাংকফুর্ট চলচ্চিত্র উৎসবে “সুতরাং” দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে পুরস্কার লাভ করে। এ ছাড়া মস্কো চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৬৭, ১৯৭৩ ও ১৯৭৯) ও নমপেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে (১৯৬৮) পুরস্কৃত হয়েছে সুভাষ দত্তের চলচ্চিত্র।
সুভাষ দত্ত পরিচালিত সর্বশেষ চলচ্চিত্র ছিল ‘ও আমার ছেলে’, মুক্তি পায় ২০০৮ সালে ।
সুভাষ দত্ত নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহ হলো — সুতরাং, আবির্ভাব, কাগজের নৌকা, পালাবদল, আলিঙ্গন, আয়না ও অবশিষ্ট, বিনিময়, আকাঙ্ক্ষা, বসুন্ধরা।
এছাড়া, ডুমুরের ফুল, অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, সকাল সন্ধ্যা, বলাকা মন, সোহাগ মিলন, নাজমা, সবুজসাথী, আগমন, ফুলশয্যা, আবদার, স্বামী-স্ত্রী, ও আমার ছেলে।১৯৭৭ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-এ তার প্রযোজনা-পরিচালনার ‘বসুন্ধরা’ চলচ্চিত্রটি সেরা পরিচালক ও প্রযোজকসহ মোট পাঁচটি পুরস্কার লাভ করে।
সুভাষ দত্ত অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে- এ দেশ তোমার আমার, হারানো দিন, সুতরাং, আবির্ভাব, ক্যায়সে কুহু, পয়সে, কলকাতা’৭১, নয়া মিছিল, কাগজের নৌকা, রাজধানীর বুকে, সূর্যস্নান, চান্দা।
আরও আছে, তালাশ, দুই দিগন্ত, সাগর, মিলন, কাজল, কার বউ, ভাইয়া, পিঞ্জর, নদী ও নারী,পালাবদল, ফুলশয্যা, আকাঙ্ক্ষা, বাল্য শিক্ষা, আয়না ও অবশিষ্ট, বিনিময়, আলিঙ্গন, নতুন সুর, আয়না, বাবা আমার বাবা অন্যতম।চলচ্চিত্র ছাড়াও সুভাষ দত্ত একসময় মঞ্চনাটকে অভিনয় করে দর্শন ও বোদ্ধা মহলে প্রচুর সমাদৃত হয়েছেন।সুভাষ দত্ত বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত একুশে পদক-এ ভূষিত হন।এ ছড়াও তিনি দেশি বিদেশি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন।
আমাদের দেশীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী ব্যক্তিত্ব, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সুভাষ দত্ত ২০১২ সালের ১৬ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। আজ তাঁর জন্মদিনে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
নওগাঁ।